আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বাউল গগন হরকরা
বাউল গগন হরকরা

নাম তার গগন দাস। বাড়ি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। আড়পাড়া গ্রামের এক কায়স্থ পরিবারে জন্ম আনুমানিক ১৮৪৫, মৃত্যু ১৯১০ সাল।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। তার বাবা-মা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে কিরণ চন্দ্র দাস নামে গগনের এক ছেলের নাম জানা যায়। দুই যুগ আগেও গগনের ভিটার অস্তিত্ব ও ফলের বাগানের সাদৃশ্য ছিল। লোকমুখে জানতে পারা যায় যে, গগন হরকরা’র একটি বড় ফলের বাগান ছিল।

উল্লেখ্য যে, গগনের বাস্তুভিটায় আসামদ্দি নামক একজন কৃষক বাড়ি করে থাকতেন এবং সেই বাড়িটি আজও ‘দাসের ভিটা’ নামে পরিচিত সে সময় দাসেরা ম-ল নামেও পরিচিত ছিল। শিলাইদহের শচীন্দ্রনাথ অধিকারী লিখেছেন গগন সামান্য শিক্ষা-দীক্ষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তার ফলশ্রুতিতেই তৎকালীন শিলাইদহের ডাক ঘরের ডাক হরকরা’র চাকুরি পেয়েছিলেন।

গাঁয়ে গাঁয়ে চিঠি বিলি করতেন আর করতেন গান। তিনি শিলাইদহে ‘সখীসংবাদের’ গানে এমন করুণ আখর লাগিয়ে গাইতেন যে, স্রোতারা মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনতেন। গগন সম্পর্কে প-িত ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রি বলেছেন ‘লালন-এর শিষ্য ধারার একজন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের ডাক হরকরা, যাঁর নাম গগন। রবীন্দ্রনাথ গগনকে সবার মাঝে বিভিন্ন ভাবে পরিচিত ও বিখ্যাত করে যথাসাধ্য মূল্যায়ন করেছেন।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল বাংলাদেশের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে জমিদারি দেখাশোনা করতে নিয়মিত যেতেন। তখন শিলাইদহে তাঁর সঙ্গে গগনের পরিচয় হয়েছিল। গগন তাকে গান গেয়ে শোনাতেন। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে গগন হরকরা, গোসাঁই গোপাল, সর্বক্ষেপী বোষ্টমী, গোসাঁই রামলাল এবং লালনের অজস্র শিষ্যের পরিচয় ঘটে।

রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম লালনের শিষ্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল আর এদের শুরুতেই গগনের সাথে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। তিনি বাউল-ফকিরদের গান শুনে আপ্লুত হয়ে নিজে শিলাইদহ ও ছেউড়িয়া অঞ্চল হতে অনেক বাউল গান সংগ্রহ ও প্রচার করেছেন। তারপরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সেগুলো প্রচার করার ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য একটাই যাতে সুধী সমাজের মধ্যে বাংলাদেশের বাউল গান সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মে।

অধ্যাপক মনসুরউদ্দিনের হারামণির গ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন শিলাইদহে যখন ছিলাম, বাউল দলের সঙ্গে আমার সর্বদাই দেখা সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনা হত। আমার অনেক গানেই আমি বাউলের সুর গ্রহণ করেছি এবং অনেক গানে অন্য রাগরাগিণীর সঙ্গে আমার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বাউল সুরের মিলন ঘটেছে। এর থেকে বোঝা যাবে বাউলের সুর ও বাণী কোনো-এক সময়ে আমার মনের মধ্যে সহজ হয়ে মিশে গেছে।

রবীন্দ্রনাথ লালনের শিষ্যদের মধ্যে গগনকেই বেশি পছন্দ করতেন। গগন হরকরার ‘কোথায় পাব তারে আমার মনে মানুষ যে রে’ গানটি বিষয়ে লিখেছেন কথা নিতান্ত সহজ, কিন্তু সুরের যোগে এর অর্থ অপূর্ব জ্যোতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এই কথাটিই উপনিষদের ভাষায় শোনা গিয়েছে : তং বেদ্যং পুরুষং বেদ মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথাঃ। যাঁকে জানবার সেই পুরুষকেই জানো, নইলে যে মরণ বেদনা। আপতির মুখে এই কথাটিই শুনলুম তার গেঁয়ো সুরে সহজ ভাষায় যাঁকে সকলের চেয়ে জানবার তাঁকেই সকলের চেয়ে না-জানবার বেদনা অন্ধকারে মাকে দেখতে পাচ্ছে না যে শিশু তারই কান্নার সুর তার কণ্ঠে বেজে উঠেছে। ‘অন্তরতর যদয়মাত্মা’ ঊপনিষদের এই বাণী এদের মুখে যখন ‘মনের মানুষ’ বলে শুনলুম, আমার মনে বড়ো বিস্ময় লেগেছিল।

শিলাইদহে এসে রবীন্দ্রনাথ যেমন সাঁইজি লালন কর্তৃক প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং লালনের পরেই প্রভাবিত হয়েছিলেন গগন হরকরা কর্তৃক। তাঁর মনে ধর্ম সম্পর্কে যে নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, তারই সমর্থন তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন বাউলদের গানে। এমনকি আজীবন লালিত উপনিষদিক দর্শনের সঙ্গেও তিনি এ সময় থেকে বাউলদের একটা সমন্বয় ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন। যে সত্যের বাণী তিনি উপনিষদের শ্লোকে শুনতে পেয়েছিলেন, তার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলেন বাউল গানে। গগনের ‘আমি কোথায় পাব তারে’ এই গানের সুরে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি।’

সরলা দেবী ইতোপূর্বে শতগান (বৈশাখ ১৩০৭) এ মূল গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন একবার যদি আমাদের বাউলের সুরগুলি আলোচনা করিয়া দেখি তবে দেখিতে পাইব যে, তাহাতে আমাদের সংগীতের মূল আদর্শটাও বজায় আছে, অথচ সেই সুরগুলো স্বাধীন। ক্ষণে ক্ষণে এ রাগিণী, ও রাগিণীর আভাস পাই, কিন্তু ধরিতে পারা যায় না। অনেক কীর্তন ও বাউলের সুর বৈঠকী গানের একেবারে গা ঘেঁষিয়া গিয়াও তাহাকে স্পর্শ করে না। ওস্তাদের আইন অনুসারে এটা অপরাধ। কিন্তু বাউলের সুর যে একঘরে, রাগরাগিণী যতই চোখ রাঙাক সে কিসের কেয়ার করে! এই সুরগুলিকে কোনো রাগকৌলীন্যের জাতের কোঠায় ফেলা যায় না বটে, তবু এদের জাতির পরিচয় সম্বন্ধে ভুল হয় না স্পষ্ট বোঝা যায় এ আমাদের দেশেরই সুর, বিলিতি সুর নয়।

১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘ফালগুনী’ নাটক রচনা করে সেখানে অন্ধ বাউল চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯১৬ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি আঁকেন। ছবিটিতে দেখা যায় বাউল রবীন্দ্রনাথ একতারা হাতে বিভোর হয়ে নাচছেন। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় গীত হয়। প্রশান্ত পাল রবি জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন, ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথ-রচিত নূতন স্বদেশী গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ নিয়ে কলকাতা উত্তাল হয়ে পড়েছে। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। রচনার তারিখও জানা নেই। সত্যেন রায় লিখেছেন : বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ৭ আগস্ট (১৯০৫ খৃ.) কলিকাতার টাউন হলে যে সভা হয়েছিল, সেই উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের নূতন সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাউল সুরে গীত হয়েছিল। ১৯০৫ খৃ. ৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ সনের ২২ ভাদ্র), তারিখের ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় এই গানটি রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে প্রথম প্রকাশিত হয়।

ও মন অসাড় মায়ায় ভুলে রবে

আমি কোথায় পাব তারে... (গগন হরকরা)

গগন কার কাছ থেকে গানের দীক্ষা নিয়েছিলেন তা জানা সম্ভব হয়নি, তবে গগন লালনের গানের খুব ভক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালন ও গগনের গান এবং গগনের সান্নিধ্য খুব পছন্দ করতেন। গগনের গানের খুব ভক্ত ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি গগনের কাছে গগন ও লালনের গান শুনতেন।

গগনের গান আমি কোথায় পাব তারের সুরে প্রভাবিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ডাকঘর’ নাটকটি গগন হরকরার জীবন থেকে প্রভাবিত হয়ে লিখেছিলেন নাটকের গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর চরিত্রটি তা প্রমাণ করে। গগনের গানে মানুষ ও তার সমাজই ছিল মুখ্য।

গগন বিশ্বাস করতেন সকল মানুষের মাঝে বাস করে এক মনের মানুষ। তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে মানবতাবাদকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। তিনি কত গান রচনা করেছেন তার কোনো সঠিক হিসেবের সাক্ষ্য কারো কাছে নেই। ধারণা করা হয় তার বহু গানে এই মনের মানুষের প্রসঙ্গ উল্লেখ হয়েছে।

তিনি বিশ্বাস করতেন মনের মানুষের কোনো ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ, কুল নেই। মানুষের দৃশ্যমান শরীর এবং অদৃশ্য মনের মানুষ পরস্পর বিচ্ছিন্ন। ‘সকল মানুষের মনে ঈশ্বর বাস করেন।’ গগন হরকরা লালনের এই দর্শনকে কোনো ধর্মীয় আদর্শের অন্তর্গত করা যায় না। লালন, মানবাত্মাকে বিবেচনা করেছেন রহস্যময়, অজানা এবং অস্পৃশ্য এক সত্তারূপে।

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি গানে তিনি মনের অভ্যন্তরের সত্তাকে তুলনা করেছেন এমন এক পাখির সাথে, যা সহজেই খাঁচারূপী দেহের মাঝে আসা যাওয়া করে কিন্তু তবুও একে বন্দি করে রাখা যায় না। গগনও ঠিক এমন-ই ভাবতেন।

সারাদিন চিঠি বিলি করা আর মনের সাধন করা ছিল গগনের একমাত্র কাজ। লালন সাঁইজি আর গগনের সময়কালে যাবতীয় নিপীড়ন, মানুষের প্রতিবাদহীনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি-কুসংস্কার, লোভ, আত্মকেন্দ্রিকতা সেদিনের সমাজ ও সমাজ বিকাশের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সমাজের নানা সংস্কারকে লালন যেমন তার গানের মাধ্যমে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। তেমনি গগন হরকরার গানেও প্রশ্ন ছিল। এ কারণে এদের সংগ্রামে আকৃষ্ট হয়েছিলেন বহু শিষ্ট ভূস্বামী, ঐতিহাসিক, সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, লেখক এমনকি গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মানুষও।

আধ্যাত্মিক ভাবধারায় গগন প্রচুর গান রচনা করেছিলেন। তার সহজ-সরল শব্দময় এই গানে মানবজীবনের রহস্য, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। গগনের রচনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ধর্ম-গোত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে অতীব সংবেদনশীল ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিম মধ্যে জাতিগত বিভেদ-সংঘাত বাড়ছিল তখন লালন ছিলেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি মানুষে-মানুষে কোনো ভেদাভেদে বিশ্বাস করতেন না।

মানবতাবাদী লালন দর্শনের মূল কথা হচ্ছে মানুষ। আর এই দর্শন প্রচারের জন্য তিনি শিল্পকে বেছে নিয়েছিলেন। এই আদর্শের ভাবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন বাউল গগন হরকরা।

শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে এক জমজমাট দুপুর। বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তিনি জমিদারের বন্ধু, ওঁর তদারকিতে ব্যস্ত সব মানুষজন। এসব আতিথ্যে গানবাজনা তো আছেই। দ্বিজুবাবুকে দু-বার অনুরোধ করতে হয় না। হাসির ছড়া, নাটক আর গান তার কলমের নিবেই বাস করে, কাগজ পেতে বসলেই হয়। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তিনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে পরিবেশন করলেন বাহবা, বাহবা নন্দলাল। সকলেই বাহবা, বাহবা করতে লাগল।

জমিদার মশাইয়ের গলায় আজ অল্প ব্যথা। তিনি বন্ধুবরকে বললেন, আমার গান তো শুনেছেন অনেক, আজ এর গান শুনুন। ফরাসের ওপর সঙ্কুচিত হয়ে বসে থাকা এক রোগা-হ্যাংলা মানুষের দিকে নির্দেশ করতে সে আরো কাঁচুমাচু হয়ে গেল। ভাবটা যেন, সত্যি আমাকে ডাকছেন? একে এলাকার সবাই চেনে। দ্বিজুবাবুকে এর পরিচয় দেওয়া হলো, এখানকার ডাকঘরের ডাক হরকরা, এর নাম গগন। আপনারা লালন ফকিরের গান তো শুনেছেন নিশ্চয়, এবার এর গান শুনুন। গগনের দিকে একবার তাকিয়ে কার উদ্দেশ্যে নমস্কার ঠুকে গগন গান ধরল।

কোথায় পাব তারে
আমার মনের মানুষ যে রে!
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে
দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে
লাগি সেই হৃদয়শশী সদা প্রাণ হয় উদাসী
পেলে মন হত খুশি দেখতাম নয়ন ভরে।
আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে নিভাই অনল কেমন করে
মরি হায় হায় রে
ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে
ওরে দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।

...উদাত্ত কণ্ঠের গান, প্রাণের গান, এই মাটির গান। শেষ হলে অনেকক্ষণ কারো মুখ দিয়েই কথা বেরোলো না।

অনুষ্ঠান ও খাওয়া দাওয়া শেষে দ্বিজুবাবুকে নিয়ে চারপাশটা একটু ঘুরতে যাওয়া হলো। দ্বিজুবাবু শিক্ষিত মানুষ, বিদেশ থেকে চাষবাস নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন। বন্ধুকে বললেন, নদীর চরে এখানে এতো উর্বর পলির জমি, কচু-ঘেচু হয়ে জঙ্গল হয়ে আছে। এসব পরিষ্কার করে এখানে আলুর চাষ করুন। আমি ভালো আলুর বীজ পাঠিয়ে দেব, দেখবেন খুব সুন্দর আলু হবে এখানে।

জমিদারমশাই ঘাড় নেড়ে তাকে সমর্থন জানাতেই কোত্থেকে একপাল লোক এসে সেই মানকচুর জঙ্গল সাফ করতে লেগে গেল। বিদায় নেবার সময় অন্যান্য কিছু স্মারক উপহারের সঙ্গে প্রত্যেক অতিথিদের দেওয়া হলো সেই মানকচু। জমিদারমশাই বললেন, এ আমাদের অতি প্রাচীন খাদ্য, আলু অবশ্য চাষ করব এখানে, তবে একে অবহেলা করা অন্যায় হবে। কত রকম যে সুখাদ্য এ থেকে প্রস্তুত করা যায়, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন। জমিদার পত্নী আড়াল থেকে শুনে মৃদু হাস্য করলেন। কিছুদিন আগেই নাছোড়বান্দা পত্নীর নির্দেশে তাকে মানকচুর জিলিপি বানাতে হয়েছিল। সে পরীক্ষায় তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন।

কয়েক সপ্তাহ পরে আবার সেই গৃহে জলসা। দ্বিজেন্দ্রলাল-গগন-পাড়ার মোড়ল-পোস্টমাস্টার সবাই এসেছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের স্ত্রী রান্না করে এনেছেন মানকচুর কালিয়া। মানকচুর কোপ্তা বানিয়ে এনেছে মোড়লগিন্নী।

আজ আর জমিদারমশাই রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করতে হলো না। কেউ কিছু বলার আগেই তিনি গান ধরলেন, রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান...।

গগন হরকরা মানুষের মধ্যে ছিলেন একেবারেই অন্যরকম। চিঠি বিলি শেষ করে চলে যেতেন লালন সাঁইয়ের আখড়ায় আর মনের আনন্দে গান গাইতেন। ভাবতেন গানেই তাঁর মুক্তি। গগনের স্বভাব ছিল ভরদুপুরে চিঠির বস্তা কাঁধে করে হাঁটতে হাঁটতে গান গাওয়া দূর থেকে যে কেউই তাঁর গান শুনে বুঝতো এ আর কেউ না গগন। গগনের এই গানে মুগ্ধ হয়েছেন মীর মোশাররফ হোসেন, কাঙাল হরিনাথের মতো বিজ্ঞজনেরা।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।