আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

ঈদে মিলাদুন্নবী
ঈদে মিলাদুন্নবী

ঈদে মিলাদুন্নবী (مَوْلِدُ النَبِيِّ) হল আরবি তিনটি শব্দের সম্মিলিত রূপ। ঈদ,মিলাদ ও নবী এই তিনটি শব্দ নিয়ে এটি গঠিত। আভিধানিক অর্থে ঈদ অর্থ খুশি, মিলাদ অর্থ জন্ম, নবী অর্থ বার্তাবাহক। পারিভাষিক অর্থে মহানবী সঃ এর দুনিয়াতে আবির্ভাবের আনন্দকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়।

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে মুসমানদের মধ্য মতভেদ রয়েছে। তবে সুন্নী মুসলিমরা এই দিনটি যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালন করে থাকে। এই দিনটিতে বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে চট্টগ্রামে। সেখানে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। সেটি আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্ট।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিম উম্মাহর নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সর্বকালীন মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ-শেষনবী, শ্রেষ্ঠনবী হজরত মোহাম্মদ (স.) এর আগমন ও তিরোধানের এদিনটি সীমাহীন তাৎপর্যপূর্ণ।পূর্ণ একটি বছরের দীর্ঘ পরিক্রমা অতিক্রম করে মহান দিনটি আজ আমাদের সামনে উপস্থিত। ঈদ, মিলাদ আর নবী তিনটি শব্দ যোগে দিবসটির নামকরণ হয়েছে। তিনটি শব্দই আরবি ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে। ঈদ শব্দটির অর্থ আনন্দ বা খুশি, মিলাদ অর্থ জন্মদিন আর নবী শব্দটি ইসলামের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ পরিভাষাসমূহের অন্যতম যা বাংলাভাষাতেও নবী অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় নবীর জন্মদিনের উৎসব বা নবীর জন্মদিনের আনন্দ।

ঈদে মিলাদুন্নবী তাৎপর্য

আজ থেকে ১৪৪৬ বছর আগে বিশ্বমানবতা যখন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত, জীবন ও জগতের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র যখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিল মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) এর। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক শ্বৈরশাসন, অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনা এককথায় সার্বিক অধঃপতন যে জাতিকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অভিধা ‘বর্বর’ আখ্যায় প্রসিদ্ধ করে তুলেছিল সেই তাদেরই মহানবী (স.) তাঁর আদর্শের সুষমা দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদর্শ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। যাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর এরশাদ করেছেন, আর যারা সর্ব প্রথম হিজরতকারী এবং আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগণ্য আর যারা তাদের আন্তরিকভাবে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সেসব লোকের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। তারা চিরকাল সেখানে বসবাস করবে আর এটাই মহা সাফল্য।(সূরা আত্-তাওবা : ১০০) বস্তুত বর্বর আরবরা আদর্শিক অবক্ষয়ের পথ ধরে মানবিকগুণাবলি হারিয়ে মনুষ্য পরিচিতির ন্যূনতম যোগ্যতাটুকুও খু্ঁইয়ে বসেছিল। সেই বর্বর মানুষগুলোই আবার যখন হজরত মোহাম্মদ (স.) এর সংস্পর্শে এসে নিজেদের চরিত্রকে আদর্শিক মানদণ্ডে উন্নীত করেছে সামান্য সময়ের ব্যবধানে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মানব জীবন ও সমাজের এই যে অভাবনীয় ও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এটা সম্ভব হয়েছিল কেবল হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর মহোত্তম আদর্শের অনুশীলনের ফলে।

মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, হে কিতাবধারীগণ! তোমাদের নিকট আমার রাসুল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয়ে মার্জনা করেন।বস্তুত তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের শান্তির পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদের স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনয়ন করেন এবং তাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করেন।(সূরা আল-মায়িদাহ : ১৫-১৬) ঈদে মিলাদুন্নবী এলে মহানবী (স.)-এর জীবনাদর্শ ভিত্তিক আলোচনা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে পালিত হয়। তাই সম্পূর্ণ দ্বিধাহীন চিত্তে, উচ্চকণ্ঠে বলতেই হয়, নবীর জন্মদিনটি দেড় হাজার বছরের পুরোনো হলেও ঈদে মিলাদুন্নবী সীমাহীন তাৎপর্যপূর্ণ।

ঈদে মিলাদুন্নবী গুরুত্ব

আজ আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে চরম অশান্ত। অশান্তির দাবানল জ্বলছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। মানবকলি শিশুরা আজ প্রতিপালনের ধারায় পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধিকার বঞ্চিত। মানব সভ্যতার মূল ভরসা যুব সমাজ আজ দিশেহারা। সমাজ প্রবাহের উৎস বয়োবৃদ্ধরা চরম হতাশায় স্থবির।পরিবার-সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কর্মস্থল, রাজপথ-বসতবাড়ি, মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা কোথাও যেন জীবনের স্বস্তি নেই, নেই নিরাপত্তা। প্রতারণা-ধোকাবাজি, প্রতিহিংসা-নিষ্ঠুরতা, মানব চরিত্রের অংশে পরিণত হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতি সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। জুলুমবাজি-দখলদারি কৌলিন্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিথ্যা সত্যের স্থান দখল করে নিয়েছে। সমাজ সেবার নামে অসহায় জনগোষ্ঠীকে শোষণ করা হচ্ছে। ধর্মের নামে জীবন ও সম্পদের বিনাশকে পুণ্যময় বলে প্রচার করা হচ্ছে।

আমাদের জীবনের বিরাজমান প্রেক্ষাপটে ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবীর জীবন চরিতকে আলোচনার ধারায় সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। রাজপথের মিছিল আর স্লোগানে নবী প্রেমের কারিশমা প্রদর্শন করেও কোনো ফল পাওয়া যাবে না। নবীর আদর্শকে চলমান জীবনের বাস্তবতায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কেবল তাহলেই জীবন ও সমাজের সব অসঙ্গতি দূরীভূত হয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। চারিত্রিক বৈকল্য মিটে গিয়ে আদর্শিক উত্তরণের পথ ধরে মানবিক গুণের ধারক আদম সন্তান ফিরে আসবে এই সমাজে। জীবনটা ভরে উঠবে শান্তির অমিয় ধারায়। মহান আল্লাহ যেমনটি এরশাদ করেছেন, বলুন, (হে নবী) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল-অসীম দয়ালু।(সুরা আল-ইমরান : ৩১)

ঈদে মিলাদুন্নবী রহমত ও বরকতময়

বিশ্বমানবের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তির পয়গাম নিয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল আওয়াল সোমবার প্রভাতের সময় মহাবিশ্বে আগমন করলেন প্রিয় নবী, শেষ নবী, রহমাতুল্লিল আলামিন, শান্তির অগ্রদূত, মানবতার মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সৃষ্টির শুরু থেকেই উভয় জগতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব রহমত ও দয়া এ নবীর অসিলায় প্রবাহিত করছেন।

মহানবী (সা.)-এর আগমনের দিন পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্ব ভুবনের জন্য নিঃসন্দেহে রহমত ও বরকতময়। আর সেই নবী আগমনের দিনে বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান অত্যন্ত আদব ও সম্মানের সঙ্গে প্রিয় নবীর আগমনক্ষণ বিভিন্ন নাতে রাসুল, জশনেজুলুস, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর জন্মসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি স্মরণ করে তথা শানে রিসালাতের অনুপম আদর্শ ও শিক্ষার ওপর সারগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আনন্দ ও খুশি উদ্‌যাপন করে। বিশ্বের সব মানুষের কাছে দ্বীনে মুহাম্মদীর প্রকৃত দিকনির্দেশনা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এই সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণ ও ইসলামের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রধান উপায় হচ্ছে প্রিয় নবীকে ভালোবাসা ও তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ করা।

ঈদে মিলাদুন্নবী ইতিহাস

পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস অতি প্রাচীন। মিলাদুন্নবীর সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন! 'রোজে আজলে'- 'পৃথিবীর আদি লগনে' সব নবীকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী মাহফিলের আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ। ওই মজলিসে এক লাখ ২৪ হাজার মতান্তরে দুই লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর (আ.) উপস্থিত ছিলেন। ওই মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর জন্ম, শান ও মান অন্যান্য নবীর সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের কাছ থেকে তাঁর ওপর ইমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা।

কোরআন মজিদের সুরা আলে ইমরান ৮১-৮২ নম্বর আয়াতে ওই মিলাদুন্নবী মাহফিলের কথা উল্লেখ রয়েছে। নবীজির সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং মিলাদ মাহফিল হচ্ছে আল্লাহর সুন্নাত বা তরিকা। সম্ভবত, সব নবী আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে থেকে মিলাদ শুনেছিলেন এবং কিয়াম করেছিলেন। কেননা, আল্লাহর দরবারে বসার কোনো অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কেয়ামকারীগণ ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম।

নবীয়ে দোজাহানের শুভাগমনের মাস হিসেবে পবিত্র রবিউল আউয়াল সমুন্নত শান ও মান-মর্যাদার মহিমায় সমুজ্জ্বল। নিঃসন্দেহে প্রিয় নবীর আবির্ভাব ও তিরোধানের স্মৃতিবিজড়িত মাস হিসেবে এ মাস বর্তমান মুসলিম মিল্লাতের জন্য ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয়। আমরা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বহু বছর ধরে পবিত্র '১২ রবিউল আউয়াল' দয়াল নবীজির পবিত্র বেলাদত (শুভাগমন) দিবস উপলক্ষে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে মিলাদুন্নবী, জশনে-জুলুস ইত্যাদি পালন করে আসছি, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে বেদায়াতে হাছানা ও মোস্তাহাব। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হুজুর (সা.)-এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান, দরুদ ও সালাম পেশ করা অতি উত্তম ইবাদত।

ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য ও ফজিলত বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে যাঁর জন্য এ ঈদে মিলাদুন্নবী, সেই দয়াল নবীর সঠিক পরিচয় জানতে হবে, তাঁর সব গুণকে নিঃশর্তভাবে বিশ্বাস করতে হবে এবং নবীজি সম্পর্কে আল্লাহর হুকুম কী, সেই জ্ঞান অর্জন করে সেভাবে ইবাদত করতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন নবীজির শান বুলন্দ করে বলেন- হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, 'হে মানব জাতি, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার অনুসারী হয়ে যাও, (ফলে) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করবেন...' সাহাবাগণ এ আয়াতের তাফসির জানতে চাইলে নবীজি বলেন- 'তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে নিজের প্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হব'- (-যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩১৩)। আর এ 'অধিক প্রিয়' মানেই গভীর ভালোবাসা। ভালোবাসার প্রবল উচ্ছ্বাস হলো প্রেম, যেমন করে ঢেউয়ের প্রবলতাকে জলোচ্ছ্বাস বলা হয়। বেশির ভাগ আলেমের অভিমত হলো, এই গভীর ভালোবাসার মাপকাঠি হলো প্রেমাস্পদের তথা প্রেমিকের আনুগত্য ও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। কেননা প্রেমিক প্রেমাস্পদের অনুগত ও অনুসারী হয়ে থাকে। অতএব যে দল সুন্নাতের অনুসারী ও শরিয়তের অনুগত, সে দলই হুজুর পাকের প্রেমিক ও প্রকৃত মুমিন। এ আয়াত দ্বারা এটাই বোঝায়।

যেহেতু রাসুলের প্রতি ভালোবাসাকে আল্লাহ তাঁর প্রতি ভালোবাসার মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেহেতু রাসুলপ্রেমই আল্লাহপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত! যার ভেতর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা নেই, সে মুমিন হতে পারে না। শুধু বাহ্যিক সুন্নাত পালন রাসুলপ্রেম নয়। বাহ্যিক সুন্নাহর সঙ্গে আন্তরিক ও আত্মিক সম্পর্ক থাকতে হবে এবং এ আত্মিক সম্পর্কের ফলে প্রেমিকের দৃষ্টিতে শুধু প্রেমাস্পদই বিরাজ করে।

আল্লাহপাক বান্দার কল্যাণার্থে অসংখ্য 'নিয়ামত ও রহমত' প্রদান করেছেন। তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ 'নিয়ামত ও রহমত' হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবীজির ইহধামে শুভাগমন! আর এই নিয়ামত ও রহমত পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই আছে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির উপায়।

এই দিনে স্মরণসভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের মাধ্যমে ওই স্মরণীয় দিবসের ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার মধ্যে বিবিধ উপকার ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ একদিকে ধর্মীয় দিবসের তাৎপর্য ও প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবনে এবং এ আদর্শের যথার্থ অনুসরণ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে একটি আদর্শ শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হবে, অন্যদিকে এসব কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির প্রকৃত ইতিহাস জানার ও সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। এভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আর যদি আমরা এসব স্মরণীয় ঐতিহাসিক দিবসকে ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ না করি, তাহলে একদিন ক্রমান্বয়ে বিস্মৃতির অতলগহ্বরে তলিয়ে যাবে এবং অনাগত ভবিষ্যৎ বংশধররা একদিন বেমালুম ভুলে যাবে।

আল্লাহর নিয়ামত ও রহমত লাভে খুশি উদ্‌যাপন ও শরিয়তসম্মত উপায়ে আনন্দ প্রকাশ বিধাতার নির্দেশের আনুগত্য বৈকি? পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা কুফরীর নামান্তর। রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- "ক্বুল বিফাদ্বলিল্লাহ-হি ওয়া বিরাহমাতিহী- ফাবিযা-লিকা ফালইয়াফ্রাহু হুয়া খাইরুম মিম্মা- ইয়াজমা'উন" (১০:৫৮) অর্থাৎ আপনি বলুন, 'আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়ার কারণে তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। তা তাদের সব ধনদৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। ' অধিকাংশ তাফসিরকার আয়াতে বর্ণিত, 'ফাদল ও রহমত' দ্বারা নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র সত্তাকে বুঝিয়েছেন। যেহেতু প্রিয় নবীর শুভাগমন জগদ্বাসীর প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে বিভ্রান্ত মানবজাতি আলোর পথের সন্ধান পেয়েছেন, গোমরাহীর অতলগহ্বরে নিমজ্জিত দিকভ্রম বনি আদম তাঁরই অসিলায় আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, লাঞ্ছিত, মানব গোষ্ঠীকে তিনি চিরকল্যাণকর আদর্শের পথে আহ্বান করেছেন এবং সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং তাঁর আবির্ভাব উম্মতের জন্য কত বড় রহমত ও সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপন করে সেই মহান রবের নিয়ামত প্রিয় নবীকে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির পথ ও পাথেয়।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।