বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী বিভাগ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সমন্বয়। এই বিভাগের অধীনে রয়েছে ৮টি জেলা: রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা। প্রতিটি জেলাই পর্যটনপ্রেমীদের জন্য বহুমাত্রিক আকর্ষণ নিয়ে হাজির হয়।
রাজশাহী জেলার বাঘা মসজিদ, পুঠিয়া রাজবাড়ি ও মন্দির; নাটোরের ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবন ও রাণী ভবানীর রাজবাড়ি; নওগাঁর সীতাকোট বিহার এবং কুসুম্বা মসজিদ; চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও প্রাচীন তাহিরপুর; বগুড়ার মহাস্থানগড় ও বিহার; জয়পুরহাটের পাহাড়পুর মহাবিহার, পাবনার হেমায়েতপুরের তাপসী আশ্রম এবং সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ — সবই রাজশাহী বিভাগকে করে তুলেছে এক অনন্য পর্যটন অঞ্চল।
এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদ–নদী, বৌদ্ধ ও মুসলিম স্থাপত্য, সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি এবং সুস্বাদু আম-লিচু রাজশাহী বিভাগকে বাংলাদেশে এক ভিন্ন উচ্চতায় তুলে ধরেছে।
১. পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি উত্তরে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ি ও তার চমৎকার মন্দিরগুলি পর্যটকদের নন্দনের ঠিকানা। এখানে স্বাধীন ও শৈব মন্দির, সরস্বতী, জগন্নাথ মন্দির রয়েছে, যেগুলো ভূতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যশৈলীর অসাধারণ নমুনা।
২. পাহাড়পুর ভাসি বা সোমাপুর মহাবিহার
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত এই প্রাচীন বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ সারা দুনিয়ায় পরিচিত। অষ্টম শতাব্দীর বিশাল মহাবিহার ও স্থাপত্য-শৈলীর ম্যাজিক এখনও ধরে রেখেছে দেখার আকর্ষণ।
৩. মহাস্থানগড় (মহাস্থানগড়)
বগুড়া জেলার কাছে অবস্থিত পুণ্ড্র নগরীর প্রাচীন অবশেষ বা মহাস্থানগড়। এটি উত্তর ভারতের প্রথম নগর রাষ্ট্রগুলোরই একটি, যা পাল ও গুপ্ত যুগের গুরুত্ব বহন করে।
৪. বাঘা মসজিদ
১৬শ শতকের সুলতান আমলে নির্মিত এই টেরাকোটা মসজিদ তার সূক্ষ্ম খোদাইকৃত অলংকরণ ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। পদ্মার তীরে অবস্থিত, যা রাজশাহীর স্থানীয় ঐতিহ্য তুলে ধরে।
৫. ভরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ-এর প্রাচীনতম মিউজিয়াম। এখানে আপনি পুরাকীর্তি, মুদ্রা, শিলালিপি ও প্রত্নপ্রাসাদসহ রাজশাহীর ইতিহাস উন্মোচন করতে পারবেন।
৬. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ সৃতি সংগ্রহশালা
বাংলাদেশের অন্যতম বড় ও সুপরিকল্পিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এখানে সংরক্ষিত।
৭. টিবাঁধ, পদ্মা তীর ও পার্ক প্রশাসন
“টি-বাঁধ” নামক পদ্মা নদীর সীমানা পাড়, যেখানে মনোরম সূর্যাস্ত এবং নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এর বাইরে “পদ্মা গার্ডেন”, জাফরুল্লা আম টব ইত্যাদি রয়েছে।
৮. সেন্ট্রাল পার্ক ও রাজশাহী চিড়িয়াখানা
রাজশাহী শহরের অন্যতম পরিবার-বান্ধব বিনোদন কেন্দ্র। এখানে শিশুদের জন্য খেলার জায়গা ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।
৯. হজরত শাহ মখ্দুম (রহ.)’র সমাধি ও মাজার
১৭শ শতকে ইসলাম প্রচারকারী এই সুফি সাধকের মাজারে প্রতি বছর হাজারো সম্প্রদায়ের মানুষ আসে আশীর্বাদ গ্রহণে।
১০. রাজশাহী রৌপ্যশিল্প (সিল্ক) ও ফলবাগান
রাজশাহী বিভাগ “শিল্ক সিটি” হিসেবে সুপরিচিত। এখানকার হস্তচালিত রেশম শিল্প, আম ও লিচুর বাগান পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।
🔎 ভ্রমনের সময় ও টিপস
- শীতকাল (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি): মনোরম আবহাওয়া, সেরা সময় সিট-এ দেখা ও খোলা স্থাপন দেখা।
- গ্রীষ্ম (মার্চ–মে): ফল মৌসুমে আম-লিচু উপভোগের সেরা সময়।
- র্ষা (জুন–অক্টোবর): পদ্মায় জলবৃদ্ধি, বোটিংয়ের জন্য সময় – তবে বন্যা ও বাতাস থাকতে পারে।
🧭 ঢাকাগামী বাস — প্রায় ৫–৬ ঘণ্টায় পৌঁছে যায়; রেল ও বিমান সড়কেও সহজ সংযোগ রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ। প্রাচীন বৌদ্ধ ও হিন্দু নিদর্শন থেকে শুরু করে সুফি ঐতিহ্য, নদীতীরের দৃশ্যাবলী — সবই এক জায়গায় পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, এই ভ্রমণ আপনাকে ইতিহাসের সঙ্গে স্বাদ ও পরিবেশের সাথে আবেগ সংযোগ করবে।
আপনার পরবর্তী ভ্রমণ পরিকল্পনায় রাজশাহী বিভাগ রাখুন, এবং এমন এক ভ্রমণ উপভোগ করুন যা মোহনীয় ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে! 😊