Select your language

সিলেট বিভাগের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানসমূহ
সিলেট বিভাগের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানসমূহ
  • Sub Title: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি এলাকা

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট বিভাগ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি এলাকা। চা-বাগান, পাহাড়-নদী, জলপ্রপাত এবং আধ্যাত্মিক পীঠস্থান—সব মিলিয়ে সিলেট বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এই বিভাগের প্রতিটি জেলা ভরপুর অনন্য রত্নে, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মন জয় করে নেয়।

১. জাফলং (Sylhet)

জাফলং হলো সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সৌন্দর্যময় পর্যটন স্থান। খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই এলাকা মেঘালয়ের ডাওকি নদী এবং স্বচ্ছ পানির জন্য বিখ্যাত। নদীর পাথর উত্তোলন, চা-বাগান ও খাসিয়া উপজাতিদের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।

দর্শনীয় বিষয়সমূহ:

  • ডাওকি নদী ও পাথর উত্তোলন
  • খাসিয়া পল্লী
  • মেঘালয়ের পাহাড়ি দৃশ্য

২. রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (Sylhet)

বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন রাতারগুল হলো প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। বর্ষাকালে এই বন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়, এবং নৌকায় করে বন পরিদর্শন করতে হয়। এটি ম্যানগ্রোভ বনের মতোই আকর্ষণীয়।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: বর্ষাকাল (জুন - সেপ্টেম্বর)

৩. বিছানাকান্দি (Sylhet)

বিছানাকান্দি একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল যেখানে ভারতের পাহাড়ি ঝর্ণার পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে আসে। পাথর, পাহাড়, ঝর্ণা ও স্বচ্ছ পানির সমন্বয়ে এটি একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

৪. লালাখাল (Sylhet)

লালাখাল হলো একটি নৌকা ভ্রমণের উপযুক্ত স্থান। এর নীলচে পানি এবং আশেপাশের চা-বাগান ও পাহাড়ি দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। নদীটির পানি স্বচ্ছ ও বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রঙ ধারণ করে।

৫. হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরান (র.) এর মাজার (Sylhet)

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হজরত শাহজালাল (র.) এবং শহরতলিতে শাহ পরান (র.) এর মাজার মুসলিম ধর্মপ্রাণদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান। প্রতিবছর হাজারো ভক্ত এখানে জিয়ারতের জন্য আসেন।

৬. মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত (Moulvibazar)

বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এটি পাহাড়ি ট্রেকিং, পিকনিক ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আদর্শ।

ভ্রমণের সময়: শীত ও বসন্তকাল

৭. হাম হাম জলপ্রপাত (Moulvibazar)

এই জলপ্রপাতটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত হলেও, অভিযাত্রাপ্রিয়দের কাছে এটি দারুণ জনপ্রিয়। গভীর বন এবং পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে হাম হাম পৌঁছাতে হয়, যা এক ভিন্ন রোমাঞ্চ দেয়।

৮. লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান (Moulvibazar)

এই বনের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলার দৃশ্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বানর, পাখি ও বিরল গাছগাছালির জন্য বিখ্যাত।

৯. তাহিরপুর ও টাঙ্গুয়ার হাওর (Sunamganj)

টাঙ্গুয়ার হাওর একদিকে মাছের ভাণ্ডার, অন্যদিকে পাখিদের অভয়ারণ্য। শীতকালে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ও বর্ষাকালে নৌকা ভ্রমণ একে অপূর্ব করে তোলে। তাহিরপুর থেকে নৌকা নিয়ে হাওর ভ্রমণ দারুণ উপভোগ্য।

১০. বারিক টিলা ও লাউড়ের গড় (Sunamganj)

বারিকটিলা হলো ভারতের সীমান্তঘেঁষা একটি পাহাড়ি অঞ্চল, যা নদী ও মেঘালয়ের পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে অসাধারণ একটি দৃশ্যপট তৈরি করে। পাশেই আছে ঐতিহাসিক লাউড়ের গড়, যা প্রাচীন রাজাদের দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

১১. চা-বাগান: মালনীছড়া, শ্রীমঙ্গল ও লাক্কাতুরা

সিলেট বিভাগকে বলা হয় বাংলাদেশের “চা-বাগানের রাজধানী”। এখানে শত শত একরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সবুজ চা-বাগান শুধু নয়নাভিরাম দৃশ্যই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে।

  • মালনীছড়া চা-বাগান (Sylhet শহরের পাশে) দেশের প্রাচীনতম বাগান, যেটি ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং খুব সহজেই ভ্রমণযোগ্য।
  • শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) — বাংলাদেশের চা শিল্পের হৃদয়। এখানকার লিম্বু, ভ্যালি, জেমলং, নিম্বারচড়া চা-বাগান ও সাত রঙের চা বিখ্যাত।
  • লাক্কাতুরা চা-বাগান — সিলেট শহরের সীমানাতেই একটি চমৎকার ঘুরে দেখার জায়গা। চা-বাগানের সবুজে ঘেরা রাস্তা ও পাহাড়ি পথ পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়।

সিলেট বিভাগের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে রয়েছে অনন্য প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদ। এ অঞ্চল শুধু প্রকৃতিপ্রেমী নয়, ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতা অন্বেষণকারীদের কাছেও স্বর্গস্বরূপ। তাই ঘুরে আসুন সিলেট বিভাগের এই অপার সৌন্দর্যের জায়গাগুলো থেকে এবং হৃদয়ে বয়ে নিন এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.