আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়া জেলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ঠ নাট্য অভিনেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো: মহিউদ্দিন
কুষ্টিয়া জেলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ঠ নাট্য অভিনেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো: মহিউদ্দিন

কুষ্টিয়া জেলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ঠ নাট্য অভিনেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো: মহিউদ্দিন ( ১৯৫৫-২০১৫ ) সক্ষিপ্ত জীবনী। প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই সময়ের ধেয়ে চলা, আর সময়ের অমোঘ গতির সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলি আমরা। শরীর নিয়ে এই যে জীবন তরীর বেয়ে চলা মৃত্যুর সময়কালেই এসে ঘাটে ফেরে সে তরী। মাঝে বয়ে যায় সেই মানুষটির যাবতীয় জীবন কর্ম।

শেখ মো: মহিউদ্দিন, তিনি ছিলেন একজন কর্মপ্রাননায় উদ্যমী ব্যক্তিত্ব। একাধারে বিশিষ্ঠ তবলা বাদক, সঙ্গীতশিল্পী, সংগঠক, নাট্য নির্দেশক, সুরকার, গীতিকার, বিশিষ্ঠ নাট্য অভিনেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মহিউদ্দিন ১৯৫৫ সালে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। বাবা মৃত: আমিনউদ্দিন শেখ পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরী করতেন। গৃহিণী মা মৃত: আনোয়ারা খাতুন প্রথম পুত্র সন্তানকে আদর করে খোকা বলেই ডাকতেন। দশ ভাই বোনের মধ্যে মহিউদ্দিন ছিলেন সকলের চেয়ে ভিন্ন। প্রথম জীবন কেটেছে তার কুষ্টিয়া জেলার থানাপাড়াতেই। স্বভাবে ছিলেন ডানপিটে। তবে শিল্পী মনোষ্কতা তার রন্ধ্রে বইতো ছোটবেলাতেই। তাই ছুটে যেত পাড়াগাঁয়ের যাত্রাপালায়। ঘরেই কখনও চিৎকার করে বলে উঠলো যাত্রার ডায়ালগ। পাশের বাড়ির সঙ্গীতমহলও তাঁকে ভীষন টানতো। ছোটবেলাতেই তবলা হাতে না পেলেও টেবিল, কিংবা হাড়ি বাজিয়ে তাল তুলতেন গানে। স্কুল জীবনে মেয়ে সেজে অভিনয়ও করেছেন। পরবর্তী জীবনে সক্রিয়ভাবে অভিনয় ও তবলা বাদনে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। আরো পরে তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কুষ্টিয়ার যুগ্ম সম্পাদক হন এবং বোধন থিয়েটারের অন্যতন ও অনন্যতম হয়ে উঠেন। দেশের বিভিন্ন জেলা এবং দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও তিনি সঙ্গীত ও নাট্যাঙ্গনে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

শেখ মো: মহিউদ্দিন ছিলেন সত্বায় বাঙালী, আত্মায় মানুষ আর মননে শিল্পী। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিলো তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সাল, তখন তিনি ছাত্র। ১৪ই এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী যখন কুষ্টিয়া দখল করে নেয় তখন তিনি রেললাইন ধরে পায়ে হেটে চুয়াডাঙ্গা যান এবং সেখান থেকে ট্রাকে মেহেরপুর এবং সেখান থেকে বর্ডার ক্রস করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উচ্চতর ডিগ্রি নিতে সোজা চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মাঝদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে। সেখানে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড রওশন আলীর ক্যাম্পে কিছুদিন থাকার পর আরো উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য আসামের তেজপুরের পাহাড়ী এলাকায়। প্রশিক্ষন শেষে ফিরে আসেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন দলের গার্নার। রাশিয়ান এল,এম,জি থাকতো তার কাঁধে। এরপর ভয়াল তীব্রতার মধ্য দিয়ে জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার নেশায় মেতে ওঠেন তিনি। দেশ হয় স্বাধীন।

যুদ্ধ শেষে পুনরায় মেতে ওঠেন সঙ্গীত ও নাট্য চর্চায়। তিনি পৌরসভায় চাকুরী করলেও মন থাকতো নাট্যাঙ্গনে। তিনি দেশের স্বনামধন্য প্রচুর নাট্য নির্দেশক ও নাট্য অভিনেতার সাথে কাজ করেছেন। শেখ মহিউদ্দিনের বর্তমানে গুছিয়ে বলা কঠিন হলেও তিনিঃ-/p>

  • অনিমেষ আইচ।
  • সাইদুল আনাম টুটুল।

বিশিষ্ঠ অভিনেতাদের মধ্যে -

  • আবুল হায়াত।
  • দিলারা জামান।
  • হাসান ইমাম।
  • মোশাররফ করিম।
  • জাহিদ হাসান।
  • আজিজুল হাকিম।
  • তৃষা।
  • জয়া আহসান।
  • এ টি এম শামসুজ্জামান।
  • জয়ন্ত মুখার্জী।
  • বাবু।

বড় পর্দায় -

  • ওমর সানি।
  • মৌসুমি।
  • হুমায়ন ফরিদি।

সহ আরো অনেকের সাথে কাজ করেছেন।

শেখ মহিউদ্দিন একাধারে ধারাবাহিক নাটক, প্যাকেজ নাটক, টেলিফিল্ম এবং সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

উল্লেখযোগ্য নাটক : পাঞ্জাবিওয়ালা, আঙ্গুরলতা, দ্বিচক্রযান, আধুলি, স্বপ্নদাহ, উচ্চ বংশের পাত্র চাই, দিদি, অপরিচিতা, গাইড, শিউলি ফুল, বায়ান্ন গলির এক গলি ইত্যাদি।

টেলিফিল্ম : কবি, ফাগুয়ার দিন।

সিনেমা : জিরো ডিগ্রি, মোল্লাবাড়ির বউ ইত্যাদি।

ব্যক্তি জীবনে খুব অদ্ভুত অন্য রকম মানুষ ছিলেন তিনি। খুব রাগী অথচ খুব হাস্যমুখী। আনন্দ হাসিতে মাতিয়ে রাখতেন কাছের মানুষগুলোকে।

২০১৫ সালে হঠাৎ - ই সুস্থ সবল মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তারি চিকিৎসায় ধরা পড়ে মরনব্যাধি ক্যান্সার। অর্থবল, জনবল সকলের অপ্রতিরোধ্য বাঁচানোর প্রয়াস আর তার বেঁচে থাকার অসীম আকুতি। কিছুই তার ওপারে যাত্রার পথ রোধ করতে পারলো না। ১৭ই মে ২০১৫ রবিবার আনুমানিক রাত ০৮:০০ টায় তিনি সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন। রেখে গেলেন শুধুই তার কর্মকান্ড ও অপার স্মৃতি.....................।

যেখানেই থাকুন, তিনি ভালো থাকুন, শেখ মো: মহিউদ্দিন পৃথিবীতে একটি অনন্য নাম হয়ে থাকুক।

ছবিঃ-

{gallery}mohiuddin{/gallery}

লিখেছেন :-
ড: সুমাইয়া খানম ঈভা।
প্রভাষক (বাংলা বিভাগ), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.