আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

একদিল শাহ মাজার
একদিল শাহ মাজার

হাটশ হরিপুর কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। এই গ্রামে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পপতি, প্রকৌশলী, পীর-দরবেশ, বাউল এবং অসংখ্য গুণী মানুষের জন্মস্থান। কুষ্টিয়া শহরে ব্যবসায়িক উন্নয়নে হরিপুরবাসী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই কাজের জন্য চলে আসেন কুষ্টিয়া শহরে সারাদিন কর্ম-ব্যস্ত সময় পার করে সন্ধ্যায় ফিরে যান আপন নীড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আগামীতে উপশহর হিসেবে পরিচিত লাভ করবে এই হাটস হরিপুর ইউনিয়ন।

হরিপুরে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে নিম্নে কিছু স্থানের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ-

একদিল শাহ মাজারঃ-

বাবা একদিল শাহ কোথায় কোখন কিভাবে জন্ম গ্রহন করে তা সঠিক ভাবে জানা যায় নি, তবে বাদশা শাহজাহানের সময় সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে কুষ্টিয়ার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। যা আজ হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত পুরাতন কুষ্টিয়ায়।

এই পুরাতন কুষ্টিয়ার শুরু হয় বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসতি স্থাপন। যার মধ্যে হিন্দু ধর্মের মানুষই বেশি। তখন বাবা একদিল শাহ ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।

সাধক একদিল শাহ তার প্রচার প্রচারনায় অনেক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে। তৈরী হতে থাকে মসজিদ শুরু হয় আযান দেওয়া। সেই সময় বারো মাসে তের পুঁজা নিয়ে মেতে উঠত হিন্দু মুসলমান সবাই।

পাঁচ/ছয়শত বছরের পুরাতন তৎকালীন পদ্মানদী তীরবর্তী একদিল শাহ নামক একজন আল্লাওলার দরগা। পুরাতন মুরুববীদের মুখ হতে জানা গেছে সমস্ত দরগাহ ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। যদি কেউ ভুল বশবর্তীতে দরগাহে ইট চুরি করে নিয়ে যেত তার বাড়ীতে ঘরের চালে অকারণে আগুন লেগে যেত, ইট ফেরত না আসা পর্যন্ত আগুন নিভতো না। জানা যায় তিনি নাকি পদ্মা নদী পানির উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারতেন। বহু স্থান থেকে মানুষ তার কাছে এসে মুরিদ হত। তিনি বহু অলোকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন।

১৯৫১ সালে তিনি মুরিদ গণের বাড়ী এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরিদগণ কুষ্টিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মুরিদগণ তাঁর লাশ এই দরগাহ প্রঙ্গনে সমাহিত করেন। মুরীদগণ তাঁর স্মরনে প্রতি বছর মাজার প্রাঙ্গনে ওরশ শরীফ পালন করেন।

দরবেশ রেজওয়ান শাহঃ-

দরবেশ রেজন শাহ কুষ্টিয়া সদর থানার হাটশ হরিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন চিশতিয়া তরিকার। তিনি একজন ভদ্র, নম্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সব সময় চুপচাপ বসে থাকতে ভালো বাসতেন। ভক্তরা আসলে আদ্ধ্যাতিক আলোচনা করতেন , গান করতেন। তাঁর গুরুও নাম ছিল দরবেশ সাধন শাহ।

তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন লালন শাহ্‌ এর তিরোধান এর পরের দিন তার বাড়িতে সাধু সংঘ অনুষ্ঠান হত। বহূ এলাকা থেকে মানুষ এই অনূষ্ঠান দেখতে আসতেন। সমগ্র দেশে তার ভক্তরা ছিল। পাংশার এক ভক্ত দরবেশ রেজওয়ান শাহ এর নামে ১১ বিঘা জমি লিখে দেন। সেখানে প্রতি বছর রেজন শাহের নামে অনুষ্ঠান হয়। তিনি কোন দিন নেশা করেননি। তিনি মৃত্যুর আগে উনার বসতবাড়ির দেড় বিঘা জমি সরকারের নামে উইল করে দিয়ে যান যাতে তার মৃত্যুর পর এই জমির মালিক তাঁর অগণিত ভক্তের হয়ে যায়।

বর্তমানে উক্ত ভিটার উপরই তার মাজার শরীফ অবস্থিত। তাঁর মাজারের পাশেই মামুন নদীয়ার মাজার।

কবি আজিজুর রহমানঃ-

কবি, গীতিগান ও বেতার-ব্যক্তিত্ব আজিজুর রহমান ১৯১৪ সালের (কারো কারো মতে ১৯১৭ সালের) ১৮ অক্টোবর কুষ্টিয়া (তৎকালে নদীয়া জেলার অন্তর্গত) জেলার কোতায়ালী থানার অন্তর্গত হাটশ হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি আজিজুর রহমানের পৈতৃক ভিটা প্রায় একশ তিরিশ বছরের পুরাতন সৃতি বহন করে চলেছে। পুরানো অভিনেতাদের নিয়ে গড়ে তুললেন নাটকের দল। অভিনয় করতেন শিলাইদহে ঠাকুর বাড়ীর আঙিনায়। এই অভিনয়-কর্মের ফলে কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর বেশ সুনাম হয়। সেকালের বিশিষ্ট অভিনেতা ধীরেন দত্ত, উপেন ঠাকুর এঁরাও অংশ নিতেন নাট্যাভিনয়ে। আজিজুর রহমান মুসলিম বীরদের জীবণভিত্তিক নাটক মঞ্চায়নে বেশী উৎসাহ বোধ করতেন। কামাল পাশা, টিপু সুলতান, সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মঞ্চায়ন তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার পরিচায়ক। তিনি এই তিনটি নাটকের অভিনয়ের মাধ্যমে মুসলিম শৌর্য-বীর্যের প্রতি দর্শকের নজর ফেরাতে চেয়েছিলেন। পরাধীন ভারতে মুসলমানদের পুনর্জাগরনের স্বপ্ন দেখাতেন কবি আজিজুর রহমান।

তিনি এবং তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা সমবয়সী হাসান ফয়েজ তাঁদের অঞ্চলে সর্বপ্রথম পায়জামা ও শেরোয়ানী পরিধান করেন। এজন্য তাঁদেরকে অনেক পরিহাস বাক্য শুনতে হয়েছিলো। তিনি দেশসেবা করার উদ্দেশ্যে কংগেসে যোগদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান অবিভক্ত বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী শামসুদ্দীন আহমদের বড় ভাই মওলানা আনসারউদ্দীনের অনুপ্রেরণায় মুসলিম লীগে যোগদান করেন।

কবিয়াল রওশান দফাদারের ইতিহাসও বেশ প্রশংসনীয়। এছাড়াও অনেক মৃত এবং জীবিত গুণী মানুষের বসবাস রয়েছে এই অঞ্চলে। আমরা পরবর্তীতে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.