আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কমরেড রওশন আলি ছিলেন একজন শ্রমিক নেতা
কমরেড রওশন আলি ছিলেন একজন শ্রমিক নেতা

১৯৪৮ সালে রওশন আলি আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। তখন থেকে তিনি ঢাকায় অবস্থান করে দলের কাজ করতে থাকেন। এসময় বাম হটকারী লাইন গ্রহন করার কারনে পার্টিতে মতভেদ দেখা দেয়। তখন ৪৯ সালে পার্টির সিদ্ধান্তক্রমে কমরেড শেখ রওশন আলিকে সম্পাদক করে তিন সদস্যের প্রাদেশিক কমিটি গঠিত হয়। তার সাথে ছিলেন আলতাফ আলী ও আব্দুল বারী। পরে রওশন আলি গ্রেফতার হলে দলের দায়িত্ব পান আলতাফ আলী।

১৯৫১ সালের সম্মেলনে মনি সিংহকে সম্পাদক করে কমিটি হয়। সে কমিটির সদস্যের মধ্যে শেখ রওশন আলি ছিলেন অন্যতম। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে তিনি গ্রেফতার হন। একটানা প্রায় ৭ বছর কারারুদ্ধ থাকার পর ‘১৯৫৬ সালের আগষ্টে তিনি মুক্তি পান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের উপর পুলিশী হামলা প্রচন্ডভাবে বেড়ে যায়। তখন কমরেড গারিস উল্লাহ সরদার, কমরেড হানিফ, কমরেড শিবেন রায় গ্রেফতার হন। কমরেড রওশন আলি, সুধীর সান্যাল সহ কমিউনিস্ট নেতাগন আত্মগোপন করেন। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপরা ওয়ার্ডে পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী নৃশংস হত্যাকান্ড চালায়।

সশস্ত্র পুলিশ নিরীহ নিরস্ত্র রাজবন্দীদের গুলি করে হত্যা করে। যারা সেদিন শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন [১] কুষ্টিয়ার দামুকদিয়া গ্রামের রেল শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন। তিনি ১৯৪৯ সালে গ্রেফতার হন। [২] কুষ্টিয়া শহরের মহিনী মিলের শ্রমিক হানিফ শেখ। ট্রেড ইউনিয়ন করার অপরাধে চাকুরিচুত্য হন এবং তিনি রেল শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতন সংগঠক ছিলেন। [৩] আনোয়ার হোসেন, খুলনার স্কুল ছাত্র। [৪] বিজন সেন, রাজশাহী পার্টির নেতা। তিনি ১৯৪৮ সালে গ্রেফতার হন। [৫] সুধীর ধর, বাড়ি ঢাকায়, রেল শ্রমিক নেতা। [৬] সুখেন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহে বাড়ি এবং [৭] কম্পারাম সিংহ, বাড়ি দিনাজপুর, তে’ভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। আহতরা হলেন, [১] আভরন সিং, দিনাজপুর, [২] ডোমারাম সিং, দিনাজপুর, [৩] কালী সরকার, দিনাজপুর, [৪] খবির শেখ, দিনাজপুর, [৫] ডাঃ গনেশ সরকার, দিনাজপুর, [৬] ভুজেন পালিত, দিনাজপুর, [৭] সত্যেন সরকার, কুষ্টিয়া, [৮] গারিসউল্লাহ সরকার, কুষ্টিয়া, [৯] সুধীর সান্যাল নন্দ, কুষ্টিয়া, [১০] লালু পান্ডে, নওগা, [১১] শীতাংশু মৈত্র, রাজশাহী, [১২] হীরেন সেনগুপ্ত, যশোর, [১৩], আব্দুল হক, যশোর, [১৪] প্রসাদ রায়, পাবনা, [১৫] আমিনুল ইসলাম বাদশা, পাবনা, [১৬] বাবর আলী, পাবনা, [১৭] ফটিক রায়, বগুড়া, [১৮] সত্য ভট্টাচার্য বাচ্চু, বগুড়া, [১৯] শ্যামাপদ সেন, [২০] আশু ভরদাজ, ফরিদপুর, [২১] অনিমেষ ভট্টাচার্য, সিলেট, [২২] অনন্ত দেব, সিলেট, [২৩] প্রিয়ব্রত দাস মঞ্জু, সিলেট, [২৪] আব্দুস শহীদ, বরিশাল, [২৫] সদানন্দ দাস, বরিশাল, [২৬] রমিদুদ্দিন, বরিশাল, [২৭] মাধব দত্ত, জলপাইগুড়ি, [২৮] নূরন্নবী চৌধুরী, বর্ধমান, [২৯] আবুল মন্সুর হাবিবুল্লাহ, বর্ধমান, [৩০] বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়, বরিশাল, [৩১] নাসির উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা, [৩২] পরিতোষ দাস গুপ্ত, খুলনা, [৩৩] মতিলাল বর্মন দিনাজপুর, ও [৩৪] পরিমল দাশগুপ্ত, বরিশাল।

রাজশাহী জেলে সশস্ত্র পুলিশী হামলার খবর পেয়ে রওশন আলি মানসিক দিক থেকে প্রচন্ড আহত হন। তিনি তার সহকর্মীদের নিয়ে জেলের মধ্যেই প্রতিবাদ স্বরুপ প্রতীক আনশন ধর্মঘট করেন।

ভাষা আন্দোলনে তিনি জেলে বসে উপলব্ধি করেছেন। তিনি প্রায়শঃ বলতেন, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিতে পারে সেই জাতিকে কেউ রুখতে পারে না। এ জাতি একদিন মুক্ত হবেই। তার দৃঢ় বিশ্বাস ১৯৭১ এ বাস্তব রুপ নেয়।

১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সরকার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ঘোষনা দিলে কুষ্টিয়ার প্রার্থী হিসেবে কমরেড রওশন আলির নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হতে থাকে। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের কিছু সাম্প্রদায়িক দলের বিরোধিতার কারনে তা সম্ভব হয়নি। তবে শ্রমজীবি জনগনের একান্ত আপনজন হিসেবে সৈয়দ আলতাফ হোসেন যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান এবং তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে কমরেড রওশন আলির অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা আজও সেদিনের রাজনীতিকদের মনে অঙ্কিত হয়ে আছে। ১৯৬৫ সালের আগষ্ট মাসে দীর্ঘদিন কারাবরন শেষে রওশন আলি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭ সালের জানুয়ারী মাসেই আবারো তাকে গেফতার করা হয়। এদিকে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক শক্তি নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি [ন্যাপ] গঠিত হয়। জেল থেকে বেরিয়েই রওশন আলি ন্যাপে যোগ দেন। শুরু হয় আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন। ১৯৬২ সালে ছাত্রদের শিক্ষা আন্দোলনের সমর্থনে তিনি কাজ করতে থাকেন।

৬০ এর দশকের শেষেরদিকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিলে ন্যাপও দুই ভাগে বিভক্ত হয়। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিনিস্ট পার্টির আদর্শ, রণকৌশল ও বক্তব্যের প্রতি সমর্থন দিয়ে আধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ ৬ দফা ঘোষনা করলে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে রওশন আলি ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার প্রতি একাত্মতা ঘোষনা করেন।

১৯৬৯ এর তীব্র গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তার উত্তরসূরি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা তুলে দিয়ে নির্লজ্জ ভাবে সরে যান। গণদাবির মুখে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচন ঘোষনা করেন।

শেখ রওশন আলিকে ন্যাপ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় প্রাদেশিক পরিষদের কুষ্টিয়া আসন থেকে। তার নির্বাচনী প্রতিক ছিলো কুড়েঘর। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাডঃ আহসান উল্লার কাছে পরাজিত হন। জনতার রায় মেনে নিলেন জনগনের নেতা রওশন আলি। নির্বাচন পরবর্তী সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকলে তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে একাধিক মিটিং করেছেন। তিনি সব সময় বলতেন সামনে একটা যুদ্ধ আসছে, যা আমাদের অস্তিত্বের যুদ্ধ, মুক্তির যুদ্ধ।

এ যুদ্ধে আমরাই জয়ী হব। তিনি সব সময় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে থানা পাড়ার একটি আম বাগানে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য তিনি ৫০/৬০ জন ছাত্র, শ্রমিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে দল গঠন করেন। এই দলের নেতৃত্ব প্রদান করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের তরুন নেতা সৈয়দ জাহেদ রুমীকে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, পাকিস্তানীদের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ব্যর্থ হবে এবং যুদ্ধ অনিবার্য। অতএব প্রস্তুতি নিতে হবে। কুষ্টিয়ার এম,এন,এ ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এবং এম,পি,এ এ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ। এ সময় ব্যারিস্টার সাহেব ঢাকায় থাকার কারনে জেলার মূল দ্বায়িত্ব এসে পড়েছিলো আহসান উল্লাহর উপর। তবে তিনিও রওশন আলির সাথে সার্বোক্ষনিক যোগাযোগ রাখতেন।

এলো সেই কালো রাত ৭১ এর ২৫শে মার্চ। ঐদিন রাত ১১টার দিকে যশোর সেনানিবাস থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্য শহরে প্রবেশ করে পুলিশ লাইন, জেলা স্কুল, থানা, আড়ুয়াপাড়ার ওয়ারলেস অফিস ও টেলিগ্রাফ অফিসে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে জনগন শহরের বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। পরদিন ২৬ মার্চ সকালে পাকিস্তানী সেনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে।

বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ই,পি,আর, পুলিশ, আনসার, একত্রিত হয়ে আক্রমনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মুক্তিকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। তারা পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়ন সহ প্রগতিশীল ছাত্র, শ্রমিক, রাজনীতিকদের একত্রিত করে রওশন আলির নেতৃত্বে যে দল গঠিত হয় তারও সংঘবদ্ধভাবে পাকিস্তানীদের আক্রমনের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এই দুই গ্রুপের ভিতরে সেতুবন্ধন হিসাবে তিনি কাজ করেছিলেন। দল পৃথক হলেও সিদ্ধান্ত যৌথভাবেই হচ্ছিল। ৩০ মার্চ ভোর সাড়ে চারটায় পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর ঘাটিতে আক্রমন করা হয়। এই যুদ্ধের মূল নেতৃত্বে ছিলেন ই,পি,আর চুয়াডাঙ্গা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী।

এদিকে কমরেড রওশন আলির নেতৃত্বে ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র বাহিনী থান ও টেলিফোন অফিসে সশস্ত্র হামলা চালায়। একাহানে সাধারন মানুষও একত্রিত হয়ে গনযুদ্ধে সামিল হয়। এসব গ্রুপের মধ্যে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা সমন্বয়ে গঠিত বিশাল বাহিনীও যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। ৩১ মার্চ সকালের মধ্যেই পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী বীর বাঙ্গালীদের কাছে পরাজিত হয়। কুষ্টিয়া সাময়িক ভাবে শত্রুমুক্ত হয়।

কমরেড রওশন আলি এবং কুষ্টিয়ার যুদ্ধ পড়তে ক্লিক করুন

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.