আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

১৯৭১ সালে ভারতের রানাঘাটে ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দদের সাথে ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল-ইসলাম
১৯৭১ সালে ভারতের রানাঘাটে ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দদের সাথে ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল-ইসলাম

ভুমিকা : কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা পত্রের রচয়িতা, বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের শীর্ষস্থানীয় সংগঠক হলেন জনাব এম আমীর-উল-ইসলাম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে তার নাম অতপ্রত ভাবে জড়িত।

ছাত্র জীবনের ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ দেশের মানুষের কল্যান তার কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য এবং জনগনের ক্ষমতায়ন ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজীবন সক্রিয় আন্দোলনে স্বাধীনতা সংগ্রামে তার গৌরব উজ্জল ভুমিকা দেশ বাসি চিরদিন মনে রাখবে। কারন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার অনুসারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহম্মদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানের সাথে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।

ইংরেজি ১৯৩৬ সালে জন্ম। পিতা: ওয়াসেল হোসেন, মাতা : আনোয়ারা বেগম, জন্ম স্থান : আড়ুয়াপাড়া কুষ্টিয়া। ভাই বোন : ৬ ভাই ৩ বোন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ পরবর্তি ঘটনা প্রবাহের সাথে সাথে তার ছাত্র জীবনের অগ্রগতি ঘটেছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কতৃক রচিত বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতী বিনয়ী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম এর তরুন বুকে আগুন জেলে দিয়েছিলো। পঞ্চাশ দশকের অন্যান্য অগ্রসর তরুনের মতই তার প্রতিবাদী সত্যা তাকে সংগ্রামী করে তুলেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালে তিনি ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। মেট্রিক পাশ করে তিনি জগন্নাথ কলেজে আই,এস,সি তে ভর্তি হন। পরে আই, এ ক্লাসে অধ্যয়ন করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন।

ছাত্রনেতা ব্যারিস্টার এম,আমীর-উল-ইসলাম :-
পুর্ববাংলার ছাত্ররাজনীতির এটা ছিলো ক্রান্তিকাল। তিনি নিজেকে এর সংগে সম্পৃক্ত করেন এবং পাকিস্তানি অপশাসন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনে তৎকালীন ছাত্র সমাজের ভুমিকা ও পাকিস্তানি সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে Basic Principles Report এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহন করেন। ১৯৫৪ সালে আই,এ পরীক্ষা দেওয়ার পর তিনি শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলনে যোগ দেন। কুষ্টিয়া সুতাকল মজদুর ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় প্রতিনিধি সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহীনি মিলের শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। শ্রমিক আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ৯২ (ক) ধারা জারির পর তিনি কুষ্টিয়া থেকে বন্দী হন। Pakistan Public Safety Act এর অধীনে নিবর্তনমুলক আটকাদেশে প্রায় দুই বছর কারাবরন করেন।

kushtia-glory-barrister-amirul-islam

১৯৭১ সালে ভারতের রানাঘাটে ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দদের সাথে ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল-ইসলাম।

kushtia-glory-barrister-amirul-islam

শিকারপুরে মুক্তিযোদ্ধাগনের মাঝে বক্তৃতারত ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম এমএনএ।

জনগনের নিকট নিবেদিত ও উৎসর্গকৃত মহান এক আদর্শ ব্রতী হয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জনগনের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারে এবং কোন প্রকার বপদেই তিনি মাথা নত করেন নি। জেলখানা থেকে স্নাতক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এবং ১৯৫৫ সালের শেষ দিকে মুক্তির পর তিনি বি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ও এম,এ তে ভর্তি হন। কারামুক্ত হয়ে ব্যারিস্টার এম,আমীর-উল-ইসলাম রাজনীতিতে আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই তার পরিবারের চাপে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান। আমীর-উল-ইসলাম ইংল্যান্ড এ পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন এর প্রথম বাঙালী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারী করার পর ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম সেখানে সামরিক শাসন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। Unhappy East Pakistan সহ লন্ডনের বহু প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ত দান করেন। ফলে পাকিস্তান সরকার তার পাসপোর্ট বাতিল করে তার দেশে প্রত্যাবর্তন এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম সেখানেও সামরিক শাসনের উপর আন্দোলন গড়ে তোলেন। বৃটেনে লেবার পার্টির নেতা ডেভিড এনালস, ডোনাল্ড চেজওয়ার্থ, পিটার শোর, মাইকেল বার্নস, পার্লামেন্ট সদস্য লর্ড ব্রকওয়ে প্রমুখ সমর্থন পুষ্ট হয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসন ও পুর্ব বাংলার শোষনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠে আন্দোলন। এভাবে সামরিক শাসন ও বাংলাদেশে শোষন ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হাউজ ও কমন্সের কমিটি রুম সহ প্রবাসী ছাত্র ও বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালীদের মাঝে গড়ে উঠে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ বাঙালীদের স্বকীয়তার প্রতিক হিসেবে গড়ে উঠে পুর্ব পাকিস্তান ভবন।

ইতোমধ্যে ১৯৬১ সালে তিনি লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন ও তৎকালীন বিখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও Sab Continents অনেক মামলায় কোন্ডলী Mr. D.N Pritt এর চেম্বারে লন্ডনেই আইন পেশায় যোগদান করেন। পেশার প্রথম জীবনে তার হাতেখড়ি Mr. Platt Mills এর কাছে। ১৯৬৩ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে আইয়ুব খান সংবিধান প্রনয়ন করে Basic Democracy প্রবর্তন করার পর সংস্কার এর অংশ হিসেবে অনেক রাজ বন্দীদের ছেড়ে দিলেন। সেই সাথে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এর পাসপোর্ট ফেরৎ দিলেন। সাথে সাথে তিনি দেশে ফেরার পর আইন পেশায় যোগ দেন। তৎকালীন গভর্নর মোনেম সরকার এর কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে অস্বীকার জানাতে যেয়ে প্রায় চল্লিশ জন ছাত্র নেতার বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে তিনি রিট মামলা ফাইল করেন।

স্বাধিকার আন্দোলনে ব্যারিস্টার এম,আমীর-উল-ইসলাম :-
স্বাধীনতা সংগ্রামের অব্যবহিত পুর্বে উত্তাল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আওয়ামীলীগ এর একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন ব্যারিস্টারি এম, আমীর-উল-ইসলাম। ৬৬'র ৬ দফা আন্দোলনে তার সরব উপস্থিতি ছিলো। এই আন্দোলনের ফলে উথিত গন জোয়ার রুখতে পাকিস্তানি জান্তা যখন বঙ্গবন্ধু সহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য বৃটেনের রানী আইন উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ স্যার টমাস উইলিয়াম কে ঢাকায় আনতে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। এবং তার প্রধান সহকারী হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন। তার এই একনিষ্ঠ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৭০ সালে তৎকালীন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় আওয়ামীলীগ এর তৃনমূল পর্যায়ে সংঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি ৬ দফার পক্ষে জনমত ও ঐক্য সৃষ্টিতে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন। তিনি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৭০ সালে। এবং আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে খসড়া শাসনতন্ত্র, নির্বাচনী ইস্তেহার এবং অন্যান্য প্রস্তাব প্রনয়নে গুরুত্তপুর্ন ভুমিকা রাখেন। এ সময়ে অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে তিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর পরই আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির হুইপ নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয় পর্ব ক্লিক করুন

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.