আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যজীবন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যজীবন

উপন্যাস: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস বাংলা ভাষায় তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম। ১৮৮৩ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ মোট বারোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: চোখের বালি, গোরা, ঘরে বাইরে, চতুরঙ্গ, শেষের কবিতা, চার অধ্যায়, বউ ঠাকুরাণীর হাট ইত্যাদি।

কবিতায়: রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট কবিতাগুলিকে বেশ কয়েকটি পর্বে ভাগ করে তার সাহিত্যমূল্য আলোচিত হয়েছে। ১৮৮৭ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে “ভানুসিংহ” ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুসারী কবি। তাঁর কবিকাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট। সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। এরপর একে একে সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মানসী (১৮৯০), সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), পলাতকা (১৯১৮), পূরবী (১৯২৫), ও মহুয়া (১৯২৯) এরপর পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) ও শ্যামলী (১৯৩৬) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায়। কবিতার মধ্যে কখনো মানবহৃদয়ের বিষণ্ণতা, মানবপ্রেম বা প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা কিংবা রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক চিন্তা আবার কয়েকটি কাব্যগ্রন্থে নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। জীবনের শেষ দশকে রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) ও শেষ লেখা (১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফুট করেছিলেন তিনি। শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি (Song Offerings)। এই কাব্যগ্রন্থটির জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে।

প্রবন্ধসাহিত্যে: রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা প্রবন্ধ ও রচনা সাহিত্যের বিপুল প্রসার ঘটে। তাঁর সংশ্লেষাত্মক রীতির প্রবন্ধগুলি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। একটি বিষয়কে অবলম্বন করে তাতে লেখকের মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি তাঁর প্রবন্ধাবলী রচনা করেছেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। এইসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন। সমাজ, কালান্তর, ধর্ম (১৯০৯), শান্তিনিকেতন, ভারতবর্ষ, ইতিহাস, সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬), সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩), প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), লোকসাহিত্য (১৯০৭) শিক্ষা (১৯০৮), সংগীতচিন্তা (১৯৬৬), সভ্যতার সংকট (১৯৪১) ইত্যাদি গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

ছোটোগল্প: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। বাংলা সাহিত্যে তাঁর রচিত ছোটোগল্পের অবদান তাঁর কবিপ্রতিভার খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। বিশ্বের প্রথম সারির ছোটোগল্পের রচয়িতা মঁপাসা, চেকভ, এডগার অ্যালন পো –এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের নাম নেওয়া হয়। মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন। এই গল্পগুলির উচ্চ সাহিত্যমূল্য-সম্পন্ন। তাঁর গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল “কঙ্কাল”, “নিশীথে”, “মণিহারা”, “ক্ষুধিত পাষাণ”, “স্ত্রীর পত্র”, “নষ্টনীড়”, “কাবুলিওয়ালা”, “হৈমন্তী”, “দেনাপাওনা”, “মুসলমানীর গল্প” ইত্যাদি। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ লিপিকা, সে ও তিনসঙ্গী গল্পগ্রন্থে নতুন আঙ্গিকে গল্পরচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন। কখনও তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিতেন।

জীবনীমূলক, পত্রসাহিত্য, ভ্রমণ কাহিণী: জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মকথামূলক গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন। বারোবার বিশ্বভ্রমণ করেছেন বিশ্বকবি। তাঁর ভ্রমণমূলক রচনা সংকলনগুলি হল- য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র, পারস্যে, রাশিয়ার চিঠি, জাপান যাত্রী।

সংগীতে: সংগীতের প্রতি রবীন্দ্রনাথের অদম্য আগ্রহ ছিল। সারাজীবনে তিনি অজস্র গানও রচনা করেছেন, সুর দিয়েছেন। বহু গানও তিনি স্বকন্ঠে গেয়েছেন। তাঁর গানের কথা যেমন কাব্যগুণ সমৃদ্ধ, সুরও তেমনি আকর্ষণীয়। বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত রচয়িতার বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা তাঁর রচনা।

নাটক-চিত্রকলা ও নৃত্যশিল্পে: নাট্যচর্চাতে রবির ছিল প্রবল উৎসাহ। কুড়ি বছর বয়সে তিনি প্রথম নাটক লেখেন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’। নানা নাটক লিখে তিনি ক্ষান্ত হননি, সেই সমস্ত নাটক পরিচালনা করেছেন, নিজে অভিনয়ও করেছেন। ভিন্নধারার প্রবর্তন করেছেন বাংলা নাটকে। বহু গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যের রচনা করেছেন। চন্ডালিকা, অচলায়তন, গুরু, ডাকঘর, চিরকুমার সভা, তাসের দেশ, মালঞ্চ, রাজা ও রাণি, মুক্তধারা, মালিনী, শ্যামা, যোগাযোগ, রাজা, মুকুট, বিসর্জন, শাপমোচন প্রভৃতি অনেক উল্লেখযোগ্য নাটক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

পরিণত জীবনে তিনি মনোযোগী হয়েছিলেন চিত্রশিল্পে। ষাট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্কণ শুরু করেন। চিত্রকলায় তাঁর কোন প্রথাগত বা আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। খেলার ছলেই তিনি আঁকতে শুরু করেছিলেন, তারপর একসময় তা’নেশায় পরিণত হয়। তাঁর অঙ্কিত অজস্র ছবি রয়েছে। সেইসব ছবিই তাঁর অঙ্কণ প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর।

রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন। এই শৈলীটি “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য। বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.