আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন সাঁইজীর সঠিক দর্শন ছেড়ে অনেকেই এখন ভুল ব্যাখ্যা দিতে তৎপর !
লালন সাঁইজীর সঠিক দর্শন ছেড়ে অনেকেই এখন ভুল ব্যাখ্যা দিতে তৎপর !

আজ থেকে ১২৯ বছরের ব্যবধানে সেই সময়ের মরমী সাধক বাবা লালন সাঁইজীর সঠিক দর্শন, দিক নিদের্শনা, শিক্ষা, পোশাক-পরিধান ও আদব-আচারণ না জেনে এখন ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু ব্যক্তিগণ! অনেকেই লালন সাঁইজীর সঠিক আদর্শকে ধারণ না করে মনগড়া ব্যাখ্যা প্রকাশের পাশাপাশি নিজেরা পোশাকধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন।এই কথা জানালেন, ভারতের হুগলী থেকে আগত নব্বই বছরের বেশী বয়সী এক লালন প্রেমী।

তাঁর এই বক্তব্যের আলোকে লেখকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জাগতিক প্রাচুর্য্যর সকল মোহ-মায়া ত্যাগ করে বাবা লালন সাঁইজী তাঁর গুরুর সেবার মধ্য দিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আর তাঁর ভক্তদের আত্মমুক্তির শিক্ষা দিয়ে গেছেন। পরিবেশ পরিস্থিতির দিক দিয়ে না জেনে অনেকে এখন বানিয়ে নিজেদের মনগড়া কথা বলে থাকেন। লালন সাঁইজী জীবনে কখনও গাঁজা বা মাদক সেবন করেন নাই। বরং তিনি সবসময় এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, তাঁর কাছে জীবন মানে মানবতা, জীবনের আদর্শ মানে মানব প্রেম। তিনি অতি সাধারণ পোশাক পরিধান করতেন ও সাধারণ জীবন যাপনে উৎসাহী ছিলেন। তাঁর ভক্তদেরকে ভক্তি, শ্রদ্ধা, নমনীয়তা ও জাগতিক মোহ-মায়া থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আজ তাঁর মাজার বা আশ্রমকে কেন্দ্র করে এই দেশের সরকার প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কমিটি বাবা লালন সাঁইজীর এক দিনের তিরোধান দিবসকে ইচ্ছা মত তিন দিনের আনন্দের আসর, মঞ্চ তৈরি ও নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত, প্রচারের দিক দিয়ে এটা প্রশংসনীয় বটে, এর বেশি বলবো না। তবে বলতে চাই চিহ্নিত কিছু অসাধু ব্যক্তি বাবা লালন সাঁইজীকে ভাঙ্গিয়ে নিজেদের লালসায় লিপ্ত হয়েছে এ কথা সত্য।

লালন সাঁইজীর এই ভক্ত লেখককে আরো বলেন, এখানে শুধু আত্মশুদ্ধি আর আত্মার মুক্তি জন্য স্বীয় গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চোখের জল দিয়ে ত্যাগ প্রকাশ করবেন, এখানে অন্য কারোর স্থান না বললেই নেই। পীর,মুর্শিদ,ওস্তাদ বা গুরু ছাড়া মুক্তি নাই এই কথা যারা বিশ্বাস করে না, তাদের এখানে না আসায় শ্রেয়। লেখক লালনের এই ভক্তের পরিচয় ও উক্ত ব্যাক্তির একটি ছবি নিতে চাইলে তিনি এবারও অনিহা প্রকাশ করেন।

বেশ কয়েকজন লালন ভক্তদের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায়, লালন ভক্তরা এখন আর নিজেরা লালনের আদর্শ মতে স্মরণোৎসব পালন করতে পারেন না। এখন তাঁর দর্শনে দীক্ষা বা বায়েত না হওয়া জনসাধারণগণ বিনোদনের আখড়া হিসেবে পরিণত করেছে। অতঃপর এখন গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও দীক্ষা নেওয়ার শিক্ষাকে বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে রুপ পেয়েছে লালন একাডেমি নামে। মরমী সাধক লালন সাঁইজী তাঁর গানে বলেন, মানুষ ছেড়ে ক্ষেপা রে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। যে মুরশিদ সেই তো রাসূল ইহাতে নাই কোন ভুল খোদাও সে হয়, এ কথা লালন কয়না কোরআনে কয়। আগে কপাট মার কামের ঘরে, মানুষ ঝলক দিবে রুপ নিহারে। এ সকল গানসহ লালন সাঁইজী আরো লিখেছেন জাতপাতের কলহ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধের বিরুদ্ধে অগণীত গান।

মরমী সাধক লালন সাঁইজীর ১২৯ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে (১৬,১৭ ও ১৮ অক্টোবর) আজ বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন কালিনদীর তীরে ছেঁউড়িয়ার লালন শাঁইজীর মাজার প্রঙ্গণে লালন স্মরণোৎসব শুরু হয়েছে। স্মরণোৎসব শুরুর আগেই তাঁর অধিকাংশ ভক্তগণ এসে গেছেন। বুধবার, বৃহঃবার ও শুক্রবার এই ৩ দিনের গুরু শিষ্যের মিলনমেলা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা বিনিময়সহ, নানা অনুষ্ঠানমালা নিয়ে এই তিরোধান দিবস পালিত হবে। মরমী সাধক লালন সাঁইজীর ১২৯তম তিরোধান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে লালন মাজারকে সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। মাজারের ভেতরে বসেছে ভক্তদের আসর। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টায় তিন দিনব্যাপী চলবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও ছেঁউড়িয়ায় কালিনদীর পাড়ে থাকছে আজ বুধবার থেকে ৩ দিনের লালন মেলা।

মরমী সাধক লালন সাঁইজী সম্পর্কে জানা যায়, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসেবে লালন শাঁইজীর আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন ছেঁউড়িয়াতে। লালন সাঁইজীর জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপামত্মর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহের আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইজীর সান্নিধ্যে তিনি সাধক গুরু হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম সাঁইজী গুরু শিষ্যের মিলনমেলা তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন শুরু হয়। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্য ও ভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান লিখে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক লালন সাঁইজী দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধনার ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। আজ ছেঁউড়িয়ার লালন আঁখড়া বাড়ী বা লালন সাঁইজীর মাজার হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.