আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন কথা – ৬স্ট পর্ব
লালন কথা – ৬স্ট পর্ব

লালন ফকির ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্য যে গভীর ভাববিনিময় ছিলো তাঁর একটি তথ্য বহুল বিবরণ পাওয়া যায় আবুল আহসান চৌধুরী রচিত “লালন শাঁয়ের সন্ধানে” নামক গবেষণা মূলক গ্রন্থে। লালনের গান রবীন্দ্রনাথকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিলো তা তাঁর কবিতা পাঠ করলেই বোঝা যায়।

তরুন যৌবনের বাউল
সুর বেঁধে নিলো আপন একতারাতে,
ডেকে বেড়ালো
নিরুদ্দেশ মনের মানুষকে
অনিদেশ্য বেদনার খেপা সুরে।

শুধু কবিতায় নয়, রবীন্দ্রনাথের বেশভুশাতেও এসেছিলো অনবদ্য এক বাউলপনা। আলখেল্লা পরা বাবরী চুলের সুশ্রীমন্ডিত রবীন্দ্রনাথ যেন বাউল বেশে লিখে চলেছেন –

“একলা প্রভাতের রৌদ্রে সেই পদ্মা নদীর ধারে, যে নদীর নেই কোনো দ্বিধা পাকা দেওয়ালের পুরাতন ভিত ভেঙ্গে ফেলতে।”

একদা শান্তিনিকেতনে ফিরে জাবার পর প্রসঙ্গেক্রমে রবীন্দ্রনাথ কালী মোহন ঘোষকে বলেছিলেন-

“তুমিতো দেখেছো শিলাইদহে লালন শাহ্‌ ফকিরের শিষ্যদের সহিত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার কিরূপ আলাপ জমতো। পোষাক পরিচ্ছেদ নাই। দেখলে বোঝবার জো নাই তাঁরা কতো মহৎ। কিন্তু কত গভীর বিষয় কত সহজভাবে তাঁরা বলতে পারতো।”

এ থেকেই বোঝা যায় তাঁর উপলব্দি দিয়ে কিভাবে শ্রধা করতেন, লালন ও তাঁর বাউল সমাজকে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও অনেক জায়গায় বলেছেন তাঁর অনেক গানেই লালনের ভাবধারা বিদ্যমান আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম লালনের গান সংকলন করেন।

গভীর জ্ঞানের অধিকারী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীরভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ফকির লালন এবং তাঁর গানকে। তাইতো অজো পাড়াগাঁর সমাজ বঞ্চিত লালন এবং তাঁর গরিব শিষ্যরা উঠে এসেছে তাঁর গানে, কবিতায়-উপন্যাসে।

লালন দর্শনের একটি অন্যতম দিক হলো গুরুবাদ। গুরুর প্রতি ভক্তি নিষ্ঠায় হলো তাঁদের শ্রেষ্ঠ সাধনা। ধ্যান ছাড়া যেমন গুরুকে ধারন করা যায়না তেমন গুরুর প্রতি অসামান্য ভক্তি ছাড়া অন্তর আত্মা পরীশুদ্ধ হয়না। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, জীবে দয়া, সত্য কথা, সৎ কর্ম, সৎ উদ্দেশ্য- এই হলো গুরুবাদী মানবধর্মের মুল কথা। মুলত ভক্তিই মুক্তি-

ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার।
সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তাঁর।।

যারা হাওয়ার সাধনা করে তারাই মূলত বাউল, তাঁদের মতে সাধনার চারটি স্তর আছে-স্তুল, প্রবর্ত, সাধক ও সিদ্ধ। প্রথম পর্যায়ের শিক্ষা হলো স্থল, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবর্ত, তৃতীয় পর্যায়ে সাধক এবং চতুর্থ বা চূড়ান্ত পর্যায়ে শিক্ষা হলো সিদ্ধ। লালনের গানেও দেখা যায় সেই ভাবদর্শন-

ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে।
সেকি সামান্য চোরা
ধরবি কোণা কানচীতে।।

লালন তাঁর অসংখ্য গানের মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ আত্মার অনুসন্ধান করেছেন, তাঁর গানে ও ভাবাদর্শে সুফিবাদের ভাবধারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে-

আপনার আপনি চেনা যদি যায়। তবে তাঁরে চিনতে পারি সেই পরিচয়।।
Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.