২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যায় এক গণ–অভ্যুত্থান, যা কেবল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না—এটি ছিল একটি প্রজন্মের জেগে ওঠা। সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন, কিছু দিনের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র–গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়।
কোটা ইস্যু থেকে গণ–আন্দোলন
২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা ব্যবস্থা ২০২৪ সালের জুনে পুনঃস্থাপিত হলে, ছাত্র সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। ১ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
১৫ জুলাই: রক্তাক্ত মোড়
প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ হলেও, ১৫ জুলাই থেকে শুরু হয় রক্তপাত। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার অভিযানে হতাহত হন হাজার হাজার মানুষ।
- সরকারি তথ্য: ৮৩৪ নিহত
- জাতিসংঘ/মানবাধিকার সংস্থা: ১,৪০০+ নিহত
- গ্রেপ্তার: প্রায় ১৭,০০০+
শেখ হাসিনার পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। ৮ আগস্ট সেনাবাহিনীর সহায়তায় গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অনেক সংস্থা একে গণহত্যা হিসেবে নিন্দা জানায়। সংবাদপত্র ও মিডিয়ায় এই অভ্যুত্থান “নতুন বাংলাদেশের সূচনা” হিসেবে বর্ণিত হয়।
রাষ্ট্র সংস্কার ও ভবিষ্যতের দিশা
বর্তমানে সরকার যে দায়িত্ব পালন করছে তা হলো:
- গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন
- নতুন সংবিধান প্রণয়ন
- বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত
- রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
জুলাই ২০২৪ ছিল এক জাতির জাগরণের সময়। এই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, যখন গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে, তখন জনগণই সবচেয়ে বড় শক্তি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক শিক্ষা হয়ে থাকবে—অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না।