আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

The Justices (Pal on the left)
The Justices (Pal on the left)

ইটের গায়ে আজও লেখা রয়েছে আর বি ডি (রাধা বিনোদ পাল)। শান বাঁধানো ঘাটটি কালের আবর্তে ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগানটিও নেই। দেশ স্বাধীনের পর একতলা বাড়িটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে হারিয়ে গেছে। কিন্তু আজও তাঁর নাম সবাই জানে। চাকরিজীবনের সুনাম, খ্যাতি তাঁকে দিয়েছে বিশ্বপরিচয়। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লি কাকিলাদহ। জাপানিদের কাছে দেবতুল্য ড. রাধা বিনোদ পালের শৈশব কেটেছে এ গ্রামে। এলাকাটি এখন জজপাড়া নামে পরিচিত। বিপিন বিহারি পালের ছেলে রাধা বিনোদ পাল আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক ছিলেন।

১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি দৌলতপুর উপজেলার মথুুরাপুর ইউনিয়নের মৌজা সালিমপুরের অধীন তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ড. রাধা বিনোদ পালের সুখ্যাতি শুধু পাকিস্তান-ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৬-৪৮ সাল পর্যন্ত জাপানের রাজধানী টোকিও মহানগরে জাপানকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে যে বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়, তিনি ছিলেন সেই আদালতের অন্যতম বিচারপতি। তিনি তাঁর ৮০০ পৃষ্ঠার যৌক্তিক রায় দিয়ে জাপানকে যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্ত করেন। এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা পায়। এরপর তিনি জাপান-বন্ধু ভারতীয় বলে খ্যাতি অর্জন করেন। খ্যাতিমান এই মনীষী ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জজপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাধা বিনোদ পালের তৈরি করা পুকুরে আশপাশের মানুষ গোসল করছে। ষাটোর্ধ্ব বিল্লাল হোসেন জানান, স্বাধীনতার পর চুয়াত্তর সালের দিকে রাধা বিনোদ পালের চার ছেলে একবার কাকিলাদহ গ্রামে এসেছিলেন। তখনও, স্বাধীনতার পরেও রাধা বিনোদ পালের একতলা বাড়িটি ছিল। উঁচু প্রাচীর আর লম্বা বারান্দা। ঘরের মধ্যে ছিল চৌকি ও বিভিন্ন আসবাবপত্র, একটা পালকিও ছিল। ছিল আম, কাঁঠাল, লিচু আর কমলার বাগান। ১৬ বিঘা জমির ওপর কেটেছিলেন পুকুর। একই এলাকার ষাটোর্ধ্ব আবদুল ওহাব জানালেন, ১৩০ বিঘা এলাকার পুরোটায় তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা ছিল। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আশির দশকে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধের অর্থাৎ, তাঁর মৃত্যুর আগে এলাকার প্রভাবশালী আইনুদ্দীন মালিথা নামের এক ব্যক্তিকে জায়গাজমি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান। এর পর থেকে যে যেমন পেরেছে সরকারি বা প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়ে জায়গাজমি ব্যবহার করছে। বাড়ির ইটসহ ব্যবহূত আসবাবপত্র এখনো অনেকের বাড়িতে পাওয়া যাবে। তৎকালীন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোল্লা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রাধা বিনোদ পালের বেশির ভাগ জমিই বেদখল হয়ে গেছে।

স্থানীয় সমাজসেবক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাধা বিনোদ পালের ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য কাকিলাদহে জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনের পরিচালক তরুতাকাজি, প্রকৌশলী দাই সহাকুরা, টেকনিশিয়ান সিংজিজু এসেছিলেন। এ ছাড়া জাপান সরকারের প্রতিনিধিরা স্মৃতিবিজড়িত এ জায়গায় হাসপাতালসহ একাধিক স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে সেগুলো সম্ভব হয়নি। জাপানিদের ইতিহাসে রাধা বিনোদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। জাপানের টোকিও শহরে তাঁর নামে রয়েছে জাদুঘর, রাস্তা, রয়েছে স্ট্যাচু। এমনকি জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতি। বেদখল হয়েছে জায়গাজমি।

রাধা বিনোদ পাল

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের কাছে তাঁর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯২০ সালে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ১৯২৫ সালে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯-২০ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৫-১৯৩০ এবং ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে অধ্যাপনা করেন। পরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৪১-৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৩-৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ- তৌহিদী হাসান - প্রথম আলো

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।