আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

হযরত শাহ পরাণ (রঃ)
হযরত শাহ পরাণ (রঃ)

হযরত শাহ পরাণ (রঃ) সুহরাওয়ার্দিয়া ও জালালিয়া তরিকার প্রখ্যাত সুফি সাধক। কথিত আছে যে, তিনি হজরত শাহ জালাল (রঃ) এর ভাগিনা এবং তাঁর জন্ম ইয়েমেনে। তিনি শাহজালাল (রঃ)-এর সাথে সিলেট অভিযানে অংশগ্রহণ করেন (১৩০৩ খ্রি) এবং সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হন। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭ কিমি দূরে দক্ষিণগাঝ পরগনায় খাদিম নগরে খানকাহ স্থাপন করে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন। সিলেট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় শাহ পরানের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

অদ্যাবধি তাঁর মাজার জিয়ারতের জন্য প্রতিদিন বহুলোক সমাগত হয়। রবিউল আউয়াল মাসের ৪, ৫ ও ৬ তারিখ তাঁর ওরশ হয়। তাঁর মাজারটি উঁচু টিলার উপরে ইট দিয়ে বাঁধানো ও দেয়াল ঘেরা অবস্থায় সযত্নে রক্ষিত। মাজারের সঙ্গে উত্তরদিকে একটি প্রাচীন গাছ আছে, যার শাখা-প্রশাখা সমগ্র মাজারের উপর বিস্তৃত। গাছটির নাম ‘আশাগাছ’। গাছের পাতা থেকে বোঝা যায় যে, গাছটি ডুমুর, আম ও অপর কোন জাতের গাছের সমন্বয়ে গঠিত। মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ভক্তিভরে ডুমুরের বীজ খায়। আমও অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তবারক হিসেবে খাওয়া হয়। মাজারের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন মসজিদ। ১৯৮৯-৯১ সালে মসজিদটির আধুনিকায়ণ করা হয়েছে। প্রায় ১৫০০ জন মুসলি­ এখন এখানে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।

শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।

মাজার পরিক্রমা

সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহ পরাণের কবর। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সংক্ষিত পরিচিতি

শাহ পরাণের পুর্ব পুরুষগণ মুলত বোখারীর শহরের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর উধ্বতন ৪র্থ পুরুষ শাহ জামাল উদ্দীন, বোখারী হতে ধর্ম প্রচারে জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে তুর্কিস্থানে এসে বসবাস করেন। বংশ সূত্রে শাহ পরাণের পিতা মোহাম্মদও একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতা শাহ জালালে আত্মিয় সম্পর্কে বোন ছিলেন। সে হিসেবে তিনি (শাহ পরাণ) হচ্ছেন শাহ জালালের ভাগ্নে। শাহ পরাণের বয়স যখন ১১ বত্সর তখন তিনি তাঁর পিতাকে হারান। পরবর্তিকালে তাঁর আত্মীয় প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবিরের কাছে তিনি ধর্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। সেখান থেকে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভে নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ পাগলা আমীনের স্মরণাপন্ন হয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। শাহ জালাল যখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহ পরাণ) খবর পেয়ে মামার সহচার্য লাভের আশায় হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হন। সিলেট বিজয়ের পর শাহ জালালের আদেশে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ পরাণ সিলেটের নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। পরবর্তিকালে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হলে শাহ জালালের নির্দেশে তিনি (শাহ পরাণ) সিলেট শহর হতে ছয় মাইল দুরবর্তি দহ্মিণকাছ পরগণাস্থিত খাদেম নগর এলাকায় এসে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করে বর্তমান মাজার টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

অলৌকিক ঘটনা

শাহ জালাল সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দিন আউলিয়া প্রদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ - কৈতর) সঙ্গে আনেন। কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শাহ জালালের কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণে এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে, প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে শাহ জালাল অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন। একথা শাহ পরাণ জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে যাও। সাথে সাথে পাক গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে গেল। শাহ জালাল ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি । কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরামত প্রকাশের কারণে মানুষ ভুল ব্যাখ্যায় পতিত হতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এবং এখানেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন।

কুষ্টিয়া হতে কিভাবে যাবেনঃ-

কুষ্টিয়া হতে সরাসরি সিলেট যাওয়ার কোন গাড়ি নাই। কুষ্টিয়া হতে ঢাকা অথবা টাঙ্গাইল বাস যোগে এসে এখান হতে অনেক কিছুর মাধ্যেমে যাওয়া যায়। কুষ্টিয়া হতে ঢাকা ট্রেন অথবা বাস যোগে এসে সিলেট যাওয়ার অনেক বাহন পাবেন। আকাশপথ, ট্রেনপথ এবং স্থলপথে যাওয়া যায়। সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে সিএনজি বা অটোরিকশাযোগে শাহ পরাণ (রাঃ) এর মাজারে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য মাজার/দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।

  1. শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)
  2. দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)
  3. ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)
  4. বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)
  5. নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)
  6. জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)
  7. লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)
  8. আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)
  9. দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)
  10. হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)
  11. জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)
  12. তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য সিলেটের জিন্দাবাজারে বেশ ভালো তিনটি খাওয়ার হোটেল আছে। হোটেল গুলো হচ্ছে পাঁচ ভাই,পানশি ও পালকি। এগুলোতে প্রায় ২৯ প্রকারের ভর্তা আছে।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.