আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বিশিষ্ট লেখক ইতিহাসবিদ শ. ম. শওকত আলী
বিশিষ্ট লেখক ইতিহাসবিদ শ. ম. শওকত আলী

শ. ম. শওকত আলী (জন্মঃ ১৯৩৯ সালের ৩১শে অক্টোবর, মৃত্যুঃ ২০০১ সালে ২৬শে ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার মাটি ও মানুষের ইতিহাস লিখে যিনি ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। দেশ বিদেশের কাছে কুষ্টিয়াকে পরিচিত করেছেন। যার কারণে কুষ্টিয়ার মানুষ গর্বিত তিনি হলেন বিশিষ্ট লেখক ইতিহাসবিদ শ. ম. শওকত আলী।

তার লিখিত গ্রন্থ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য সন্ধানে এখনও গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে চলেছে। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কুষ্টিয়া শহরের একজন বিশেষ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সু-বক্তা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সারাজীবনে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং কবিতা লিখেছেন তিনি। যা তদানিন্তন সময়ে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

এ মনীষী কুষ্টিয়ার ইতিহাস, কুষ্টিয়া জেলায় ইসলাম গ্রন্থ দুটির প্রণেতা হিসেবে এক নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক।

কুষ্টিয়ার যেসব কৃতি সন্তান অনেকটা নিভৃতে থেকেই কুষ্টিয়ার জন্য অবদান রেখে গেছেন শ. ম. শওকত আলী তাদের অন্যতম। কেবল শিক্ষক হিসাবে নয় মানুষ হিসাবেও তিনি ছিলেন সদালাপী, নিরহংকারী। তাঁর চিন্তা ভাবনা ধ্যান ধারণার অনেকটা জুড়ে ছিল কুষ্টিয়া ।

কালের প্রবাহে ফিকে হয়ে আসা কুষ্টিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মেরের কাছে তুলে ধরার তাঁর যে প্রয়াস সে দিক থেকে কুষ্টিয়াবাসী তাঁর কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবে। তিনি কুষ্টিয়াকে সবার সামনে তুলে ধরতেই নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

ছাত্রদের তিনি অপত্য স্নেহে আপন করে নিতেন। অনেককে তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগী করেছিলেন। পথ ভুলে হয়ত তারা হারিয়ে যেতে পারত কোন অন্ধকার জগতে তিনি তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন । তাঁর অসংখ্য ছাত্র ছড়িয়ে আছে সারা দেশ জুড়ে, কেউ হয়েছেন প্রবাসী ।

উদার চিত্ত, অসাম্প্রদায়িক হৃদয়ের এই মানুষটির জন্ম ১৯৩৯ সালের ৩১শে অক্টোবর সাবেক নদীয়া জেলার কুমারখালী (তৎকালীন) বর্তমান খোকসা থানার আমবাড়ীয়া গ্রামে।

শিক্ষা জীবনঃ

ছোটবেলা থেকে তিনি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন কুমারখালী সেনগ্রামের ছাত্র হিসাবে তিনি খুলনা বিভাগে প্রাথমিক বৃত্তি পরীায় খুলনা বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন । কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে ইতিহাসে লেটার সহ এস.এসসি পাশ করেন ১৯৫৬ সালে । কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচ. এসসি পাশ করেন উক্ত কলেজ থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬১ সালে । ঐ সময়ে কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন । রাজশাহী টিচার্স টেনিং কলেজ থেকে বি.এড. ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে বাংলায় এম. এ পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯৭২ সালে।

পেশা:

শিল্পপতি মোহিনী মোহন প্রতিষ্ঠিত মোহিনী মোহন বিদ্যাপীট স্কুলে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। অত্যন্ত যোগ্যতা ও সুনামের সাথে প্রায় দশ বছর শিক্ষকতা করেন । এরপর কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে যোগদান করে অবসর গ্রহনের আগ পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯৫ সালে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি ১৯৯৭ সালে আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজিয়েট স্কুল ও টির্চাস ট্রেনিং কলেজের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে।

সাংগাঠনিক কর্মকান্ড:

তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। শত বাধা বিপত্তি এড়িয়ে সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা তার ছিল। তিনি ছিলেন কুষ্টিয়া সাহিত্য পরিষদ, কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি, কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী, কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সদস্য ও বাংলা একাডেমির ভূতপূর্ব সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কুষ্টিয়া ইউনিটের ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য। মানবাধিকার কমিশন কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি, কুষ্টিয়া প্রবীন হিতৈষী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া শাখা সহ সাধারন সম্পাদক ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুষ্টিয়া জেলা শাখার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও এডহক কমিটির সদস্য ছিলেন ।

সাহিত্য কর্ম:

তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও সংকলনে গল্প, কবিতা, নিবন্ধ, প্রবন্ধ লিখতেন । তাঁর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ কুষ্টিয়ার ইতিহাস (১৯৭৮), কুষ্টিয়া জেলায় ইসলাম (১৯৯২) । এছাড়াও তাঁর গৃহে প্রচুর পান্ডুলিপি রেখে গেছেন। তাঁর সর্বশেষ সাহিত্য প্রচেষ্টা ছিল কুষ্টিয়ার ইতিহাসের সংস্করণ প্রকাশ করা। তিনি এর পান্ডুলিপিও সম্পূর্ণ করেছিলেন। সেটি তার দু’পুত্র আব্দুল্লাহ সাঈদ এর সম্পাদনায় ও হামিদুল্লাহ সুমন সাঈদ এর প্রকাশনায় ২০১২ সালের ১৬ জুলাই দ্বিতীয় সংস্করন প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি ১৯৫৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার মজমপুরের বিশিষ্ট চৌধুরী পরিবারের হালিমা খাতুনকে বিবাহ করেন। তাঁর তিন পুত্র চার কন্যা । এই মহান শিক্ষক, ইতিহাসবিদ, সাহিত্যানুরাগী, সদালাপী মানুষটি ২০০১ সালে ২৬শে ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। লেখনীর মাধ্যমে তিনি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তার মাধ্যমে তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.