আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

খোকসা কালী পূজা মন্দির
খোকসা কালী পূজা মন্দির

হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম বর্ণ বৈষম্যহীন এলাকাবাসীর সনাতনী ভক্তির স্থান ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র কুষ্টিয়ার খোকসার কালী পূজা মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সব শ্রেনী পেশার মানুষের অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়। মাঘের আমাবশ্যা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শূরু হয়। এ পূজা উপলক্ষ্যে সাড়ে সাত হাত লম্বা বিশাল দেহের দৃষ্টি নন্দন কালী প্রতিমা তৈরী করা হয়। বংশ পরাক্রমে স্থানীয় প্রতিমা শিল্পি সুকুমার বিশ্বাস, নিমাই বিশ্বাস ও তাদের তিন সহযোগী প্রতিমা তৈরীর কাজ করে আসছে। কালী পূজা উপলক্ষ্যে মন্দির প্রাঙ্গনে পক্ষকাল ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় দেশ বিদেশ থেকে আসা প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে।

খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা কোন সুদুর অতীতে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে বর্তমানে পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্রাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কলংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন। আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ’শ বছর। আত্মপ্রচার বিমূখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জন মনুষ্যহীন জঙ্গালাকীন স্থানে এ কালীপূজা আরম্ভ করেন বলে লোক মুখে শোনা যায়। জনৈক জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার জুবাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু। খবর পেয়ে জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালীপূজা আরম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালীপূজার সূত্রপাত। মহিষ বলির শেষে পাংশার জমিদার ভৈয়বনাথ ও শিলাইদহের জমিদার ঠাকুরের সম্মানে জোড়ো পাঠা বলি দেওয়া হতো। সেই স্রোতধারায় এখনও দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের মানসার পাঠা বলি দেওয়া হয়।

কালের স্বাক্ষী খোকসার কালীবাড়ীঃ

বিশাল এক জোড়া বট ও পাকুর গাছ বেষ্টিত প্রাত্যাহিক পূজা মন্দির। এখানে রাখা আছে নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভুষণ দেব রায় কর্তৃক গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ড। এটি বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন। এ প্রস্তর খন্ডের গঠন অনেকটা চৌকির মতো। কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ডটিকে সারা বছরই পূজা করা হয়। ২৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ফুট চওড়া পিতলের পাত দিয়ে তৈরী শিব ঠাকুর পূজার পাট আসন উল্লেখযোগ্য। আগের পূজা মন্দিরটি প্রমত্তা গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৩৪১ বাংলা সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে সরিয়ে আনা হয়। বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতি বছর মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী মূর্তিসহ সাড়ে বার হাত দীর্ঘ মাটি ও খড় দিয়ে তৈরী কালীমূর্তি পূজান্তে বিসর্জন দেয়া হয়। এখানে নির্মান করা হচ্ছে নাট মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলায় আগত পূজার্থী এবং দর্শনার্থীদের সাময়িক বিশ্রামাগার ও পূজা কমিটির কার্যলয়। মন্দিরের সম্মুখে ভাগে রাস্তা এবং পশ্চিমে গড়াই নদী পর্যন্ত বিস্তৃত মাঠ। এটাই মেলাঙ্গন। প্রতি বছর একই তিথিতে প্রচলিত নিয়মে এ পূজা হয়ে আসছে। মাঘি আমাবশ্যার এক মাস আগে কদম কঠের কাঠমো তৈরী করা হয়। এ কাঠামেই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরী মূর্তিতে বার্ষিক পূজা হয়ে থাকে। জমিদার আমলে এখানে এক মাসেরও অধিক সময় মেলা চলতো।

কালীপূজা শুরুতেই ক্রোধের প্রতীক মহিষ ও পাঠা বলির প্রথা চালু হয়। প্রথম দিকে পাঠা বলির সংখ্যা ছিল অনির্ধারিত। বার্ষিক পূজার দিনে প্রথম প্রহরে চন্ডি পাঠান্তে একটি পাঠা বলি দেয়া হতো। দিনের শেষ প্রহরে দেবিকে আসনে তোলার পর নড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্ট্রেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘি সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানসার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমলের আদলেই আজও প্রচলিত রয়েছে।

রাজা-জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর খোকসা কালীপূজা ও গ্রামীণ মেলার প্রসার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রমত্তা গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙনে নবাবী আমলে স্থাপত্য মন্দিরটি ১৩৪০ বাংলা সালে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পরের বছর ১৩৪১ বঙ্গাব্দে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় কালী মন্দিরটি নতুন করে তৈরী করা হয়। ইতোমধ্যে কালীবাড়িকে ঘিড়ে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। গড়াই নদী পাড়ের নিত্য পূজার টিনের চার চালা ঘরটি গড়াই নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর নতুন বিশাল মন্দির আজ শোভা বর্ধন করছে নবনির্মিত আধুনিক পূজা মন্দির ও পরিচালনা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যালয়। নাট মন্দির নির্মানাধীন থাককলেও আলোর মুখ দেখেনি ধর্মীয় ও সেবায়েত আশ্রম।

বর্তমান পূজারীর পূর্বপুরুষ জনৈক পন্ডিতকে একদিন বিশালাকৃতির একটি মহিষ আক্রমন করলে উক্ত পন্ডিত হাতে থাকা চন্ডিগ্রস্থ ছুরে মেরে মহিষটি বধ করেন। এ ঘটনা নলডাঙ্গার রাজার কর্নগোচর হওয়ার পর আলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এ ব্রাহ্মন পরিবারের চার শরিকের জন্য ১৪শ বিঘা এবং কালীপূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাঠামো তৈরীর মিস্ত্রি, ধোপা, নাপিত, মালাকার, ভুঁইমালী, ঢাকী ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকারীকে চাকরানা হিসেবে ১২ বিঘা করে জমি নিস্কর ভোগের সুযোগসহ বার্ষিক পূজার সাত দিন দপাম্বিতা খরচ নির্বাহের জন্য ১৬ বিঘা জমি দান করেন। কালীপূজা মেলা স্থানান্তর করে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচী গৃহীত হয়। বর্তমান পূজা কমিটিসহ এলাকার সুধিজনেরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ২৮ অগ্রাহায়ন ১৩৮৯ বঙ্গাব্দের আমাবশ্যার তিথিতে বার্ষিক পূজা মন্দিরটি পাকাকরণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনসহ সংস্কৃতি চতুম্পট ভবন নির্মানের মাধ্যমে কাব্য, ব্যাকারণ, ন্যায় ও স্মৃতি বিষয়ে শীক্ষাদান ধর্মীয় পাঠাগার, প্রাত্যহিক ও বার্ষিক পূজার সময়ে আগত ভক্তদের জন্য সেবায়েত ভবন ও কালীবাড়ীর সীমানা প্রাচীর নির্মানের ব্যাপক কর্মসূচী গৃহীত হলেও নানাবিধ সমস্যা বিদ্যামান থাকায় শুধুমাত্র বার্ষিক পূজা মন্দির, সংস্কৃতি চতুষ্পাট ভবন ও দর্শনার্থীদের বিশ্রামগার তৈরীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ঐতিহ্যমন্ডিত খোকসা কালীপূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সম্পর্কে আজও কোন ইতিহাস রচনা করা হয়নি। তবে খোকসার কালী পূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও প্রসার বৃদ্ধি সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

অবস্থান: খোকসা বাজার সংলগ্ন গড়াই নদীর তীরে

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.