আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলা সাহিত্য
রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের অমর প্রাণপুরুষ, বাংলা কবিতার মহান বরপুত্র, বাংলা, বাঙালির অতি আপনজন, বাংলা সাহিত্যাকাশে নক্ষত্র বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ প্রাণের কবি, প্রেমের কবি, জীবনের কবি, প্রকৃতির কবি, গানের কবি সর্বোপরি মানুষের ভালোবাসার কবি। আর তাই কবি ও মানুষ রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যপ্রিয়, প্রকৃতিপ্রিয়, সব মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।

এই বিশাল সুন্দর পৃথিবীতে যতদিন রবে সূর্য, চন্দ্র-তারা আর পাখি গাইবে গান, নদী বইবে ধারা, ততদিন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে সাহিত্য ও মানুষের মাঝে আলো ছড়াবেন। এ কথা ঠিক, মানুষ রবীন্দ্রনাথ সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই, তার উপস্থিতি কেউ কোনোদিন আর কখনো দেখতে পাবে না, তবে তিনি মানুষের মধ্যে সতত তার কর্মের-গুণের জন্য বেঁচে থাকবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকৃত সৃষ্টিকর্ম এবং সৃজনশীল ব্যক্তিকে কোনো কিছুর বিনিময়ে মুছে ফেলা যায় না। প্রত্যেক সৃজনশীল মানুষ তার সৃজনশীল কাজের দ্বারাই সমাজ ও মানুষের কাছে বেঁচে থাকে।

এ কথা আজ বলার অবকাশ নেই, বাংলা সাহিত্যে হাতেগোনা যে ক'জন বড় মাপের খ্যাতিসম্পন্ন কবি হিমাদ্রীর মতো মাথা উঁচু করে বাংলা সাহিত্য জগতে দাঁড়িয়ে আছেন তার মধ্যে একজন এবং অন্যতম পুরোধা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আধুনিক কবি। তার গানে, কবিতায়, ছোট গল্পে আধুনিকতার রূপ প্রকাশ পেয়েছে। বহুমাত্রিক শিল্পস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ। তিনি বিশেষ করে তার কবিতায়-গানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে খুব ভালো করেই ধারণ করেছিলেন। আমরা তার কবিতায়-গানে পলে পলে আধুনিকতাকে সরবে দেখতে পাই। তার কল্পনাশক্তি ছিল প্রখর তবে তা সৃজনশীল ও শৈল্পিকতায় পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প তাকে এক অনন্য মানুষ হিসেবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছে। আর এ কথা তো দিবালোকের মতো অতীব সত্য, কবি রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্ব কখনই কল্পনা করা যায় না।

মা ছাড়া যেমন সন্তানের অস্তিত্ব মেলে না, ফল বা ফুল ছাড়া যেমন বৃক্ষের পূর্ণতা পায় না, তেমনি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা সাহিত্য ভাবা যায় না। কাজেই বলা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথ আর বাংলা সাহিত্য একে অপরে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আর তাই বাংলা সাহিত্যের যে কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে অথবা কিছু করতে বা বলতে গেলেই সেখানে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিব্যি মূর্তিমান হয়ে আবির্ভাব হবেন। এ জন্যই শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সমাজ-সভ্যতা, মানুষ-জীবন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, চিন্তা-ভাবনা করতে গেলেই রবীন্দ্রনাথ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সামনে চলে আসেন। শিল্পসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যে বিশাল এলাকাজুড়ে দখল রয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যকে করেছে অনেক অনেক সমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীল মহৎ সাহিত্যকর্ম সমাজ-সভ্যতা সম্পর্কে জানতে বুঝতে প্রেরণা জোগায়, মনের খোরাক মেটায়, মানুষ জীবন নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। আমরা তাই তার কাছে অনেকাংশে ঋণী, যা শোধ হওয়ার নয়।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যকে অনেক বেশি উঁচুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব সাহিত্য দরবারে বাংলা সাহিত্য আজ যে অবস্থানে অবস্থান করছে, পৃথিবীর মানুষকে বাংলা সাহিত্য স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে তা মূলত রবীন্দ্রনাথের অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনার ফসল। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো দিক নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের হাতের স্পর্শ লাগেনি।

কবিতা, ছড়া, গল্প, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, নাটক_ সবখানেই রবীন্দ্রনাথের রয়েছে সরব উপস্থিতি। এমনকি তিনি সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ছবিও পর্যন্ত এঁকেছেন। তার ছবি আজ বিশ্ববাসীর কাছে নতুন করে ভাবনার খোরাক মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ একজন কবির পাশাপাশি চিত্রশিল্পীও বটে। মোটকথা রবীন্দ্রনাথের কলমের কালির ছোঁয়াই বাংলা সাহিত্যের সব বিভাগই আলোর মতোই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ধন্য সমৃদ্ধ উন্নত হয়েছে বাংলা সাহিত্য।

কবিতা, গান তো মানুষের জীবনের খোরাক, প্রেরণার উৎস, চেতনার শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রেম, ভালোবাসা, সাম্য, সম্প্রীতি, সৌজন্যবোধ, সৃষ্টিশীলতা, মননশীলতা সব সময়ের জন্য সুন্দরের সহায়ক। আর তাই রবীন্দ্রনাথ শত শত গান, কবিতা সৃষ্টি করে মানুষের মনকে করেছেন সাহিত্যের প্রতি উৎসাহিত, দিয়েছেন অদম্য প্রেরণা, দিয়েছেন অসীম শক্তি, দিয়েছেন অকৃত্রিম ভালোবাসা। তিনি কোনোভাবেই হতাশাবাদী নন। আমরা দেখি যে তিনি তার সব রচনায় সব ক্ষেত্রে মানুষকে সমাজকে আশার আলো দেখিয়েছেন। আমাদের জীবনের সঙ্গে, চেতনার সঙ্গে, মননের সঙ্গে, আন্দোলনে, ভাষার মধ্যে, দেশপ্রেমে সৃষ্টিশীলকর্মের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আছেন এবং থাকবেন।

আমাদের শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-জীবনে-চেতনায় রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই অপরিহার্য। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পরিচ্ছন্ন, পরিমার্জিত, পরিশীলিত, জীবনবোধ, চেতনাবোধ বিনির্মানের একজন সফল সার্থক রূপকার ও কারিকর। কারণ সমাজে যারা ব্রাতজন তারাই মানুষকে, সমাজকে, জ্ঞানকে, সৃষ্টিশীলতাকে, চেতনাকে, মননকে আলোর শিখার মতো সতত জ্বালিয়ে রাখে।

এ পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। ফলে বাংলা, বাঙালি জাতি, বাংলা সাহিত্য স্বগর্বে মাথা উঁচু করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। বিশ্ববাসী বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জাতিকে তাই নতুন করে চিনেছে এবং জেনেছে।

বিশ্বের অন্য কোনো দেশে যা নেই আমাদের দেশে তা আছে। যা নিয়ে আমরা গর্বিত। আমাদের আছে লালনগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, ভাটিয়ালি, জারিসারি, মারফতি ইত্যাদি নানারকমের গান। এসব আমাদের প্রাণ, ঐতিহ্য এবং অহংকার, আমাদের জাতীয় জীবনে এগুলো প্রেরণার উৎস ও বড় অর্জন। এ নিয়েই আমরা বেঁচে আছি এবং থাকব। কিন্তু দুঃখ হলেও সত্যি, এখানে যে ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হওয়ার এবং প্রসার ঘটার দরকার তা অনেকটা হচ্ছে না। বাঙালি জাতির জীবনে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটা হলো রবীন্দ্রনাথ। সেই রবীন্দ্রচর্চা থেকে যদি আমরা পিছিয়ে পড়ি তাহলে জাতি হিসেবে অনেক পেছনে পড়ে যাব। যেটা আমাদের কাম্য হতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কী আমাদের প্রাণের টানে, জীবনের টানে, চেতনার টানে, শিল্প ও সাহিত্যের টানে রবীন্দ্রনাথের কাছে বারবার ফিরে যেতে হবে। এটাকে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই।

আসলে ঘৃণিত নিন্দুকেরা রবীন্দ্রনাথকে যতই অস্বীকার, অবজ্ঞা, অবহেলার চোখে দেখুক না কেন বাংলা সাহিত্যাকাশে রবীন্দ্রনাথ চিরউজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ফুটে থাকবে। সেখান থেকে তাকে চুল পরিমাণ সরানোর ক্ষমতা কারো নেই বা কখনই হবেও না। অতীতে যারাই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে বা তাকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করেছে তারাই মিথ্যা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হয়েছে। আর বর্তমানেও কেউ যদি সেটাই করে বা ভাবে তারাও ব্যর্থ হবে, ময়লা-আবর্জনায় পতিত হবে।

রবীন্দ্রনাথ তার অমর মহৎ সাহিত্যকর্মের জন্যই মানুষের কাছে বাঙালির পাঠকের কাছে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বাংলা, বাংলা সাহিত্য আর রবীন্দ্রনাথ একই সত্তা। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার পরিপূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.