খেজুরের রস
খেজুরের রস

খেজুরের রস খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহকৃত রস। এটির স্বাদ মিষ্টি। খেজুরের রস শুধু মাত্র শীতকালে সংগ্রহ করা হয়। খেজুরের রস থেকে পিঠা, গুড়, ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। খেজুরের রস খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কুষ্টিয়াতে খেজুরের রসের ব্যাপক চাহিদা আছে।

খেজুর শুষ্ক ও মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়ায় গঙ্গার নিম্ন অববাহিকার খেজুর গাছে যথেষ্ট শাঁসযুক্ত অর্থাৎ উৎকৃষ্ট খেজুর হয় না। তাই ইহা খাদ্য হিসেবে খুব একটা ব্যবহার হয় না। তবে এই গাছের রস আকর্ষণীয়।

আশ্বিন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ (অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি) পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ ও কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল পর্যাপ্ত রসের জন্য উপযোগী। এই সময়ে প্রাপ্ত রসের স্বাদও ভালো হয়। পৌষ-মাঘ মাসে (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি) তাই সবচেয়ে বেশী রস পাওয়া যায়। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রসের পরিমাণ ও মান কমতে থাকে।

নূন্যতম ৫ বছর বয়সী গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করা হয়। গাছের বয়স, এলাকা বা মাটির প্রকারভেদ ছাড়াও একই মৌসুমের বিভিন্ন সময় ও গাছের যত্নের ওপর রসের প্রাচুর্যতা নির্ভর করে। আবার পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে বেশী রস দেয় এবং রসও তুলনায় বেশী মিষ্টি হয়।

কুষ্টিয়াতে শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকম পিঠা ও পায়েস। তাই বাণিজ্যিকভাবেও খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেন গাছিরা। কুষ্টিয়া জেলার বাইরের গাছিরাও জেলায় এসে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন। সুস্বাদু এই খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাটালি ও লালি গুড়। খেজুর ও রস বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার গাছিরা।

কুষ্টিয়ায় জনজীবনের স্বাভাবিক পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। রাস্তায়, জমিতে কিংবা পুকুরে, মাঠে-ঘাটে খেজুর গাছের আশপাশে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের প্রায় চার মাস রস সংগ্রহ করা যায়। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে গাছিরা সংসার চালাই। শীতের পিঠা ও পায়েসের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। এখানে ১০০ টাকা দরে প্রতিকেজি খেজুরের গুড় এবং এক কলস রস প্রকার ভেদে এক থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

কুষ্টিয়া শহরের বাহিরে মোল্লাতেঘরিয়া ভিতরে, বাইপাস সড়ক, গোপালপুর, টাকিমারা, বটতৈল এর আশাপাসের বিভিন্ন স্থানে, মিরপুর, ভেড়ামারা, কুমারখালি, খোকসা এবং দৌলতপুরে শীতকালীন সময়ে রস পাওয়া যায়।

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ