আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের মহারাজা
প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের মহারাজা

Maharaja of Jessore Kingdom Pratapaditya

প্রতাপাদিত্য (১৫৬১–১৬১১ CE) একজন জমিদার ছিলেন, পরবর্তীতে একজন হিন্দু রাজা হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেন।, বারো ভুঁইয়ার অন্যতম প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তার রাজ্য উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে শুরু করে, বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, যশোর ও নড়াইল পর্য়ন্ত বিস্তৃত ছিল। যশোরের ইতিহাস প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস।

তার ২৫ বছরের রাজত্বকালের গৌরবগাঁথা আজ পর্যন্ত যশোর-খুলনা অঞ্চলে বিদ্যমান।অনেকের মতে, প্রাচীন গৌড় রাজ্যের যশ হরণ করে ‘যশোহর’ নামটি হয়েছিল। জেমস ওয়েস্টল্যান্ডের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, বিক্রমাদিত্যের এক ছেলে ছিল। যার নাম ছিল প্রতাপাদিত্য। তার সম্পর্কে বলা হতো তিনি ছিলেন পৃথিবীর সকল সুন্দর গুণের অধিকারী। প্রতাপাদিত্য তার পিতার মৃত্যুর পরে যশোরের সকল সম্পদের একমাত্র উত্তরসূরী হয়েছিলেন।

প্রতাপাদিত্যের বাবা বিক্রমাদিত্য শ্রীহরি ছিলেন কায়স্থ এবং বাংলার আফগান শাসক দাউদ খান কররানির অধীনে একজন প্রভাবশালী রাজ কর্মচারী। দাউদ কররানী প্রধানমন্ত্রী লোদী খানকে হত্যা করেন এবং রাজক্ষমতাবলে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। দাউদ খান কররানী তাকে ‘বিক্রমাদিত্য’ উপাধি প্রদান করেন এবং মৃত জমিদার চাঁদ খানের জমিদারি তাকে দান করেন। উল্লেখ্য যে, চাঁদ খানের কোন বংশধর ছিল না। দাউদ খানের পতনের পর শ্রীহরি বিপুল সংখ্যক সরকারি সম্পদের মালিক বনে যান । শ্রী হরি ১৫৭৪ সালে বাওর এলাকায় যান এবং সেখানে নিজেকে মহারাজা বিক্রমাদিত্য হিসেবে ঘোষণা করেন। বৈষ্ণব ধর্ম মতে পিতা-মাতা তাঁর নাম রেখেছিলেন গোপীনাথ। ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে অতি অল্প বয়সে শ্রীহরি বিক্রমাদিত্যর ঔরসে বসু কন্যার গর্ভে একটি সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় প্রতাপ গোপীনাথ। এই প্রতাপই বিশ্ববিশ্রুত বঙ্গেশ্বর মহারাজা প্রতাপাদিত্য। যুবরাজ অবস্থায় তিনি প্রতাপাদিত্য নামে পরিচিত হয়েছিল।

রাম রাম বসু প্রতাপ সম্পর্কে লিখেছেন,

“জ্যোতিষিরা বললেন সব বিষয়েই উত্তম কিন্তু পিতৃদ্রোহী। হরিষেবিষাদ মনে রাজা অন্নপাশনে পুত্রের নাম রাখলেন প্রতাপাদিত্য।”

কার্যক্ষেত্রে প্রতাপ মাতার মৃত্যুর কারণ হয়েছিলেন এবং পিতৃদ্রোহী হয়েছিলেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র ৫দিন তখন সুতিকাগৃহে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। শ্রীহরি পত্নী বিয়োগে যেমন মর্মাহত হলেন তেমনি পুত্রের পিতৃঘাতী হওয়া নিশ্চিত মেনে নিয়ে অশান্তি ভোগ করতে লাগলেন। সুতরাং প্রথম হতেই তিনি প্রতাপের উপর বিরক্ত হলেন।

প্রতাপ পিতৃস্নেহ তিনি বিশেষ পাননি। অল্প বয়সে মা মারা যাওয়ায় কাকীমা বসন্ত রায়ের প্রথমা স্ত্রীর স্নেহে লালিত পালিত হতে থাকেন। পিতা তাঁর উপর বিরক্ত থাকলেও স্নেহমমতার মুর্তিমান অবতার রাজা বসন্ত রায়ের স্নেহগুণে তাঁর বিশেষ কোন ক্ষতি হয়নি। খুল্লতাত পত্নীর অতুল স্নেহে প্রতাপের যে নিজের জননী নাই তা তিনি জানতেন না। প্রতাপ কাকীমাকে মা জ্ঞান করে বড় ভক্তি করতেন। তাঁর ঔদ্ধত্য মায়ের স্নেহের কটাক্ষে বিলুপ্ত হতো। প্রতাপের রাজত্বকালে এই মাতাই “যশোহরের মহারাণী” বলে পরিচিত ছিলেন।

অতি শিশুকালে প্রতাপ শান্ত ও নিরীহ ছিলেন। আপত্য স্নেহের প্রভাবে বাল্যকালেই প্রতাব চঞ্চল ও অস্থিরমতি হয়ে উঠলেন। এই সময় প্রতাপ বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও মেধাবী ছিলেন। তিনি জীবনে সংস্কৃত, ফারসী ও বাঙ্গালা ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি সংস্কৃতি তান্ত্রিক স্তবাদি অতি সুন্দর আবৃত্তি করতেন। ফারসীতে পত্র লিখতে ও অতি সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতেন। প্রাদেশিক বাংলায় তিনি সৈন্যগণের সহিত কথা বলতেন। এই সব শিক্ষাই তাঁর তত মত ছিল না। তিনি শাস্ত্র অপেক্ষা শস্ত্র শিক্ষায় অধিক পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট শিক্ষক ছিলেন রাজা বসন্ত রায় স্বয়ং। তিনি পিতৃব্য বসন্ত রায়ের সুযোগ্য অভিভাবকত্বের উত্তর কালে যশোর রাজ্যের সুযোগ্য ব্যাক্তিত্ব হিসেবে গড়ে ওঠেন। পূর্ব থেকেই রাজা বসন্ত রায় উদীয়মান যুবকের অদম্য উদ্যম ও লোক পরিচালনায় ক্ষমতা দেখে প্রতাপের সম্পর্কে অনেক কিছু আশা করতেন।

বাল্যকালে প্রতাপ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। তিনি তরবারী, তীর চালনা ও মল্লযুদ্ধে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। জন্মাবধি সুন্দরবনের সাথে প্রতাপের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি সুন্দরবনের জঙ্গলে ব্রাঘ্র, হরিণ, গন্ডার (পূর্বে ছিল) প্রভৃতি শিকার করতেন। প্রতাপ বন্ধুবান্ধবসহ অরণ্যে প্রবেশ করে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। এই সময় বালক প্রতাপের উচ্ছৃঙ্খলতায় বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় বড়ই বিপদে পড়লেন। অবশেষে উভয়ে পরামর্শ করে স্থির করলেন যে, বিবাহ দিলে প্রতাপের মতির পরিবর্তন হতে পারে। এই জন্য তারা উভয়ে উদ্যোগী হয়ে প্রতাপের বিবাহ দিলেন। ঘটকারিকায় প্রতাপের তিন বিবাহের কথা উল্লেখ আছে। সর্বপ্রথম প্রতাপের বিবাহ হয় পরমকুলীন, জগদানন্দ রায়ের (বসু) কন্যার সাথে। ১৫৭৮ খৃষ্টাব্দে প্রতাপ সম্মানিত অব্যল্য জিতামিত্র নাগের কন্যা শরৎকুমারীর সাথে মহাসমারোহে বিবাহ করেছিলেন। এই শরৎকুমারীই তাহার পাটরাণী বা প্রধান মহিষী ছিলেন। প্রতাপের তৃতীয় বিবাহ হয়েছিল প্রতাপের রাজা হবার অনেক পরে। বিবাহ হইল পরমাসুন্দরী, গুণবতী, প্রণয়িনী রূপে স্ত্রী পেলেন, কিন্তু তার ঔদ্ধত্য ও মৃগয়াভিযান কমিল না। বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় পূনরবার পরামর্শ কেও প্রাতাপকে রাজনৈতিক শিক্ষার জন্য রাজধানী আগ্রায় পাঠায়। উদ্দেশ্য ছিল বাদশাহ আকবরের দরবারে যশোর রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে রাজবাড়ীর উপদ্রব দ্রবীভুত হবে এবং তার অনুপস্থিতিকালে ভ্রাতৃদ্বয় কিছুকাল নিশ্চিন্তে রাজ্য শাসন করতে পারবেন। ১৫৭৮ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে প্রতাপ সূর্যকান্ত ও শংকরের সহিত রাজা বসন্ত রায়ের পত্র নিয়ে আগ্রার দরবারে উপমীত হন। প্রতাপ পত্র নিয়ে টোডর মল্লের সহিত সাক্ষাৎ করেন এবং তিনিই সুযোগমত প্রতাপকে বাদশাহের সহিত পরিচিত করিয়ে দেন। তিনি বাদশাহ আকবরকে প্রতাপের কথা খুব ভালভাবেই জানালেন। প্রতাপ সেখানে বিশাল ভারত সাম্রাজ্যের পরিচালনার বিষয়, বিভিন্ন বীর, বিশেষ করে রাজপুত বীরদেব কীর্তি কলা সন্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলেন। রাজধানী আগ্রায় তিনি প্রায় তিন বৎসর ছিলেন। ১৫৮০ খৃষ্টাব্দে টোডর মল্ল বঙ্গের জায়গীরদার দিগের বিদ্রোহ দমন করার জন্য বঙ্গে আগমন করেন এবং পরবর্তী বৎসর বঙ্গের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে অতি সুন্দরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। টোডর মল্লের অনুপস্থিতিকালে প্রতাপ কৌশল অবলম্বন করে যশোর রাজ্যের সনদ নিজ হাতে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। প্রতাপ রাজধানীতে থাকার সময় তাঁর পিতা ও পির্তব্য তাঁর কাছে রাজস্ব পাঠাতেন। প্রতাপ দুই তিনবারের টাকা সরকারে জমা না দিয়ে আত্নসাৎ করেন। যথাসময়ে সরকার হতে রাজস্বের অনুসন্ধান করা হলে প্রতাপ বসন্ত রায়ের নামে দোষারোপ করেন। তাঁর দোষে রাজস্ব রাজধানীতে পাঠানো হয় না। বঙ্গে বিদ্রোহের পর এ সংবাদ শুভসূচক বোধ হল না। বিক্রমাদিত্যের হাত হতে যশোর রাজ্য বিচ্যুত করার আদেশ হলে গুনগ্রাহী সম্রাট প্রতাপের প্রতি সুদৃষ্টি করেছিলেন এবং উদীয়মান যুবকের নামে যশোর রাজ্যের দ্বিতীয় সনদ লিখে দিয়েছিলেন। প্রতাপ সঞ্চিত অর্থ থেকে বাকী রাজস্ব পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। ১৫৬১ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। শ্রী হরি তার রাজ্যেকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ৮ ভাগের ৫ ভাগ প্রতাপাদিত্যকে এবং ৮ ভাগের ৩ ভাগ তার ভাই বসন্ত রায়কে প্রদান করেন।

বসন্ত রায় ভাই ছিলেন লক্ষীকান্ত (যিনি পরবর্তীতে লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরী নামে পরিচিত হন)।যাকে তিনি প্রতিপালন করেন। তিনি তাকে প্রতাপের সাথে জমিদারি এবং প্রশাসনিক বিষয় শিক্ষা দেন। প্রতাপাদিত্য যশোরের প্রশাসনে যোগদান করেন এবং নিজেকে একজন যোগ্য শাসক হিসেবে প্রমাণ করেন। প্রতাপাদিত্যের অভিষেক কালে বারোভুঁইয়াদের অনেকে যশোর গিয়েছিলেন এবং প্রতাপাদিত্যের কাছে বঙ্গের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য দেখছিলেন যে, সম্রাট আকবর আগ্রার রাজদরবার, রাজনীতি ও রাজপরিবারের আত্মকলহ- এসব বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং এর ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছে। এই সুযোগে প্রতাপ সৈন্যগঠন ও সীমান্ত রক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন। মূলত আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রাধান্য স্থাপন, পাঠানদের পক্ষ সমর্থন, বঙ্গদেশে হিন্দু শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মুঘল ছাড়াও মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের পাশবিক নির্যাতন থেকে প্রজাদের রক্ষা করার জন্য প্রতাপ চেষ্টা করছিলেন। এই লক্ষ্যেই তিনি নতুন রাজধানী গোছাচ্ছিলেন এবং মুঘলদের বিতাড়নের উপায় নিয়ে বঙ্গের অন্য ভুঁইয়াদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন। ভুঁইয়াদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতাপের এই বিদ্রোহী চেতনার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করলেও অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখে। প্রতাপ রাজ্যের অধীশ্বর হবার পর রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেন। ১৫৮৩ সালে রাজা বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর যশোর নগরের ৮/১০ মাইল দক্ষিণে যমুনা নদী ও ইছামতী নদীর সংগম স্থলে সুন্দরবন ঘেষে ধুমঘাট নামক স্থানে এক নতুন নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। তথায় প্রতাপাদিত্যের রাজাভিষেক সম্পন্ন হয়। ধুমঘাটের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে তীরকাটি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। ধুমঘাটের দূর্গ নির্মাণের প্রধান ভার ছিল পাঠান সেনাপতি কমল খোজার উপর। প্রবাদ আছে যে, প্রতাপের রাজ্যভিষেক উৎসবে এক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।রাজ্য বিভাজনের পরও বসন্ত রায় অনেক দিন রাজ্যের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপাদিত্য সিংহাসনে আহরণ করেই সৈন্যবল বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন। সুচতুর প্রতাপ প্রথম থেকেই মোঘলদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে থাকেন। তিনি মোঘলদের আহ্বানে সামন্তরাজ হিসাবে কয়েকবার যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন। তিনি মোঘলদের সাথে যেসব যুদ্ধযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে মানসিংহের সাথে উড়িষ্যা অভিযান উল্লেখযোগ্য। উড়িষ্যা থেকে তিনি গোবিন্দ দেব বিগ্রহ এবং উৎকলেস্বর থেকে শিব লিংগ এনে গোপালপুর ও বেদকাশী নামক স্থানে স্থাপন করেন।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ১৫৮৭ খৃষ্টাব্দে প্রতাপাদিত্য নিজ হাতে রাজ্য শাসন শুরু করেন। ঐ বছরই ধুমঘটি দুর্গ নির্মাণ শুরু হয় এবং অচিরেই কাজ সমাপ্ত হয়। মোঘলদের সামন্তরাজ হবার জন্য মানসিংহের সহিত উড়িষ্যাভিযানে যান। উড়িষ্যা যুদ্ধ থেকে ফিরবার পরে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণার মনস্থ করেন এবং মোঘলদের বিরুদ্ধাচারণ করতে শুরু করেন। পিতৃব্য বসন্ত রায় তাঁকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেন এবং ভয়াবহ পরিণামের কথা বুঝায়ে দেন। প্রতাপ নিষেধ বাণীর উল্টো মর্ম বুঝে বসেন। পিতৃব্য ও ভ্রাতুষ্পুত্র একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকল না। প্রতাপ সর্বদা বসন্ত রায়কে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন।

প্রতাপ কিছুদিন তার খুড়ার সাথে সদ্ভাব রক্ষা করে চলেছিলেন। বসন্ত রায় নানাবিধ সৎকার্য সাধন করে প্রজাদের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। পিতৃব্যের এই সুনাম প্রতাপের মনে বিদ্বেষভাবের জন্ম দেয়। এক শ্রাদ্ধ উৎসবে নিমন্তণ পেয়ে প্রতাপ পিতৃব্যের বাড়িতে গমন করেন এবং সামান্য একটা কথায় সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিন পুত্র সহ তাহাকে হত্যা করেন। এই হত্যাকান্ডের সময় বসন্ত রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র রাঘব রায় এক কচুবনে আত্মরক্ষা করেন বলে পরবর্তীকালে তিনি কচুরায় নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

কেউ কেউ বলেন যে, প্রতাপ ও তাহার জামাতা রামচন্দ্র রায়ের মধ্যে যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়েছিল, তার মূলে বসন্ত রায়ের কারসাজি ছিল। প্রতাপ শুধুমাত্র পিতৃব্যকে হত্যা করে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। এই ঘটনায় লক্ষীকান্ত অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং জমিদারি প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করে কালীঘাটে তার জন্মভূমিতে চলে যান। কথিত আছে, প্রতাপাদিত্য সে সময় নিজ নামে মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রতাপাদিত্যের নিজ শাসিত রাজ্যও বহু বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপের ক্ষমতা ও খ্যাতি পুরো ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় সকলে বিশ্বাস করত, দ্বৈববল ছাড়া কেউ এমন বলশালী হতে পারে না।

মোঘলদের সাথে যুদ্ধ জয় ও অন্য রাজাদের সাথে সখ্যতা

পিতৃব্যের মৃত্যুর পর প্রতাপাদিত্য সমগ্র যশোর রাজ্যের অধিকার লাভ করেন এবং মহারাজ উপাধি ধারণ করে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। এই সময় বাংলা ও উড়িষ্যার মোঘল-পাঠান শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। প্রতাপ স্বভাবতই পাঠান শক্তির অনুকূলে ছিল। সেসময় তার মনে ভাটি বাংলায় একটি স্বাধীন রাজ্য সংস্থাপনের আশাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দের কাছাকাছি প্রতাপ বাংলার মোঘল সুবেদারকে অমান্য করে রাজ্য শাসন করে যেতে লাগলেন এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। প্রতাপাদিত্যের সমর সজ্জার উদ্দেশ্য বাংলার সুবাদারের কর্ণগোচর হলে তিনি পর্যায়ক্রমে শের খাঁ এবং ইব্রাহীম খাঁ নামক দুইজন মোঘল সেনাপতিকে প্রতাপের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলেন। কিন্তু তার প্রতাপকে সামান্য ভূস্বামী মনে করে যশোহরে আসলো। কিন্তু কোন কার্যকরী ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারল না। তার যশোহর বাহিনীর নিকট পরাজয় স্বীকার করে পশ্চাদপসরণ করল। প্রতাপাদিত্যের এই সকল বিজয় বার্তা চারদিকে ছড়ায় পড়লো। বিভিন্ন এলাকার ভূইয়াগণ তাঁর সহিত মৈত্রী স্থাপন করে মোঘল বাদশাহের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন। পর পর দুবার মোঘল বাহিনীকে পরাজিত করে তার ধনলিপ্সা বেড়ে গেল। তিনি মোঘল শাসনাধীন সপ্তগ্রাম বন্দর লুট করে ধন সঞ্চয় করতে অগ্রসর হলেন। সপ্তগ্রামের ফৌজদার প্রতাপাদিত্যের অতর্কিত আক্রমণ রোধ করতে পারলেন না। ফলে সপ্তগ্রামের সমুদয় ধন সম্পদ প্রতাপাদিত্যের কুক্ষিগত হল। শ্রীপুর জমিদার বাড়ী শ্রীপুর উপজেলা সদরের ১ কি.মি. এর মধ্যে পাল রাজার রাজপ্রাসাদের ধ্বংশাবশেষ রয়েছে। এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন সারদারঞ্জন পাল চৌধুরী। শ্রীপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জমিদারীর আওতাধীন এলাকা ছিল। শ্রীপুর জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাসাদতুল্য মন কাড়ার মত দৃষ্টি নন্দন বাড়ি এখন বাড়ির প্রবেশদ্বার তথা সিংহদ্বার ভগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। জমিদারীর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় নবাব আলীবর্দ্দি খার নিকট হতে এ জমিদারী খরিদ করা হয়। বৈবাহিক সূত্রে বাংলার বারো ভূইয়ার অন্যতম যশোরের মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সংগে সারদারঞ্জন পাল চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের ছেলে উদয়াদিত্যের সংগে জমিদার সারদারঞ্জন পাল চৌধুরীর মেয়ে বিভাপাল চৌধুরীর বিবাহ হয়েছিল। এ সূত্র ধরে মহারাজ প্রতাপাদিত্য শ্রীপুরে এসেছিলেন। আরো জনশ্রুতি আছে এ বিভাপাল চৌধুরীকে কেন্দ্র করে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বৌঠাকুরানীর হাট' উপন্যাস রচনা করেন। বর্তমানে বাড়ীর প্রবেশদ্বার তথা সিংহদ্বার ভগ্ন অবস্থায় বিরাজমান।

জলদস্যু দমন

মহারাজা প্রতাপাদিত্য রাজদন্ড গ্রহণ করে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ভাগে মগ ও পর্তূগীজ জলদস্যুদের অত্যাচার দমনে মনোনিবেশ করেন। মগ ও ফিরিংদের অত্যাচারে ভারতের ভূস্বর্গ বঙ্গ দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হল। মগেরা কোন শাসন মানত না। মগেরা যে মুল্লুকের যেত সে এলাকাকে একেবারে ধ্বংস করে ছাড়িত। তৎকালে দক্ষিণ বঙ্গ জলদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। তারা এদেশের নারী পুরুষ ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করতো। বন্দীদেরকে হাতের তালুতে ছিদ্র করে সরু বেত ঢুকিয়ে হালি করে জাহাজের পাটাতনের নীচে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হতো। ভাগীরথী থেকে সুদুর চট্টগ্রাম পর্যন্ত তারা এরুপ উপদ্রব চালাত। এসব জলদস্যুদের হার্মাদ বলা হত। প্রতাপাদিত এদের বশীভূত করেন। অনেকেই তাঁর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল।

সামরিক অভিযান

এই সময় আগ্রার দরবারে নানারকম অশান্তি বিরাজ করছিল। বাদশাহ আকবরের মৃত্যুর পর শাহজাদা সেলিম নুরুদ্দীন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এইবার জাহাঙ্গীর দরবারে প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলো। এই সময়ে বসন্ত রায়ের পুত্র কচু রায়ও সমগ্র কাহিনী বাদশাহের গোচরীভূত করল। সমুদয় অভিযোগ শুনে জাহাঙ্গীর তাঁর সেনাপতি মানসিংহকে পাঠালেন প্রতাপাদিত্যকে দমনের জন্য।

১৬০০ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কাশী থেকে রাজমহলে আসলেন এবং বঙ্গদেশকে প্রকৃতভাবে মুঘল করতলে আনার জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশাল সৈন্যবহর নিয়ে যশোর অভিমুখে যাত্রা করেন। প্রায় ২৫ বছর পাঠানরা বঙ্গে পরাজিত হলেও প্রতাপাদিত্য ও অন্যান্য ভূঁইয়াগণের কারণে সেই পরাজয়ে মোঘলদের কোন লাভ হয়নি।

মানসিংহের এ যাত্রা সম্পর্কে ভারতচন্দ্র বলেন

‘আগে পাছে দুই পাশে দু’সারি লস্কর।
চললেন মানসিংহ যশোহর নগর।।
মজুন্দারে সঙ্গে নিলা ঘোড়া চড়াইয়া।
কাছে কাছে অশেষ বিশেষ জিজ্ঞাসিয়া।’

মানসিংহ কালিন্দি নদী পাড় হয়ে বসন্তপুরে ছাউনি করলেন এবং দেখলেন, প্রতাপাদিত্য তার চারিদিকে সৈন্য সাজিয়ে যুদ্ধের সমস্ত আয়োজন করে রেখেছেন। বসন্তপুর ও শীতলপুরের পূর্বভাগে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। হঠাৎ একদিন ভীষণ ঝড় বৃষ্টি হয়ে মানসিংহের তামান রসদ ও ছাউনী বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেল। শুকনা জ্বালানী কাঠ ও খাদ্যের অভাবে সৈন্যদের ভীষণ অসুবিধা হলো। এই সময়ে আন্দুলিয়া নিবাসী ভবানন্দ মজুমদার নামক এক জমিদার রাজা মানসিংহকে সর্বপ্রকার সাহায্য দান করলেন। তারই সাহায্যে মানসিংহ ধুমঘাট আক্রমণ করতে সমর্থ হন।

অগণিত দিন ধরে এ যুদ্ধ সংঘটিত হলো এবং মানসিংহ বিজয়ী হয়ে প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন। মানসিংহ প্রতাপকে চিনতেন এবং অত্যন্ত ভালোবাসতেন। উড়িষ্যাভিযানে প্রতাপের বীরত্বের কথা তার মনে ছিল। তিনি যশোর যুদ্ধে বঙ্গীয় বীরের অসাধারণ সমর কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি নিজে মহাবীর, তাই বীরত্বের মর্যাদা বুঝতেন। যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করলেও তিনি প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য যশোর রাজ্যের ১০ আনা অংশে (বাকি ৬ আনা বসন্ত রায়ের ছেলে কচু রায়) মুঘলদের সামন্ত রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।মানসিংহ স্বাধীনতার চিহ্ন পতাকা ও মুদ্রা বিলুপ্ত করবার আদেশ দিয়েছিলেন।যদিও লক্ষীকান্তের উত্তর পুরুষরা দাবি করে যে রাজা মানসিংহ বসন্ত রায়কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। প্রতাপাদিত্য কে পরাজিত করার পর রাজা মান সিংহ তার গুরুপুত্র লক্ষীকান্ত এর সাথে দেখা করেন।

প্রতাপাদিত্যের রাজত্বে সুন্দরবনের অবদান

দিলি­র সম্রাট আকবর অনেকবার সেনাবাহিনী পঠিয়েছেন এই সকল বিদ্রোহ দমনের জন্য কিন্তু সুন্দরবন প্রতাপাদিত্যকে একটি ভালো অবস্থান দিয়েছিলো যার ফলে সে সহজেই সম্রাটের বিরোধিতা করতে পারতেন। তার এই বিদ্রোহ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলেছিলো। তবে এই বিদ্রোহ কোন সাধারণ যুদ্ধের মত ছিল না। এই বিষয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকগণের নিরবতা এটা প্রমাণ করে যে স্থানীয় বিরোধ মিটানোর জন্য আসলে সম্রাট খুব ছোট একটা সৈন্য দল পাঠিয়েছিলেন। চাঁচড়ার রাজপরিবারের নথি থেকে জানা যায়, খান আজিম নামে আকবরের একজন সেনাপতি প্রতাপাদিত্যের কিছু পরগনা দখলে নিতে পেরেছিলেন। যদিও প্রতাপাদিত্য সেই রাজ শক্তিকে অনেকবার হারিয়েছিলেন কিন্তু এতে করে তার ক্ষমতা ও প্রভাবও অনেক কমে গিয়েছিলো। বিশাল রাজ্যের অধিকাংশই সুন্দরবনের অন্তর্গত ছিল। তাহার সময়ে যশোর রাজ্য বাঙ্গলার একটি প্রধান জনপদ হওয়ায় দুর্গম সুন্দরবন লোকের পক্ষে সুগম হয়ে উঠে। কিন্তু তখনও সুন্দরবনের নিবিড় অরণ্য সমভাবে বিদ্যমান থাকিয়া ব্যাঘ্র, গগুর, কুম্ভীরের আশ্রয়স্থানরূপে বিরাজ করিত। প্রতাপদিত্যের সময় যে সকল জেসুইট পাদরী এতদ্দেশে আগমন করিয়াছিলেন, র্তাহীদের বিবরণে সুন্দরবনের যে বর্ণনা দৃষ্ট হয়, তাহাতে তাহার নিবিড় অরণ্য ও বন্ত জস্তুর উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ও তার স্থাপিত গ্রাম, নগর, গড়, চত্তর প্রভৃতির চিহ্ন অদ্যপি সুন্দরবনের মধ্যে বিদ্যমান থাকিয়া ষোড়শ শতাব্দীতে ইহা কিরূপ গৌরবময় হইয়াছিল তাহার পরিচয় প্রদান করিতেছে ।

সপ্তদশ শতাব্দী হইতে আবার ইহার জনপদসমূহ নিবিড় অরণ্যে পরিণত হইতে আরম্ভ হয়। যে কারণে সুন্দরষনের নিবিড় অরণ্য নিবিড়তম হয়, সাধারণতঃ তাহার দুইটি কারণ অনুমিত হয়ে থাকে। তাহার প্রথম কারণ জলপ্লাবন ও ভূমিকম্প এবং দ্বিতীয় কারণ মগ ও ফিরিঙ্গী জলদ্বস্বাগণের অত্যাচার। এই দুই কারণে ইহার অধিবাসিগণ ইহার মধ্যস্থ গ্রাম নগর পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হওরায় সুন্দরবনের সপ্তদশ শতাব্দী, আবার ধ্বংসারম্ভ ।

মুগলদের বিরুদ্ধে জোট ও প্রচারণা

বাংলার জমিদারদের মধ্যে প্রতাপাদিত্য ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি মুঘল সুবাদার ইসলাম খানের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। ১৬০৮ সালে প্রতাপাদিত্যের প্রতিনিধি হিসাবে শায়খ বারি এবং তার কনিষ্ঠ পুত্র সংগ্রামাদিত্য প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে সুবাদারের দরবারে হাজির হন। চুক্তি অনুসারে, প্রতাপাদিত্য কে সশরীরে হাজির হবার শর্তে রাজপুত্র সংগ্রমাদিত্য কে সুবাদারের জিম্মায় রেখে দেয়া হয়। ১৬০৯ সালে আত্রাই নদীর তীরে প্রতাপাদিত্য মুঘল সুবাদারের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।

প্রতাপাদিত্য এই মর্মে রাজি হন যে তার রাজ্যে ফেরত যাবার পর তিনি ৪০০ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে তার কনিষ্ঠ পুত্র সংগ্রাম আদিত্যকে মুঘল সামরিক বাহিনীতে যোগদান করার জন্য প্রেরণ করবেন। এবং তিনি নিজে আড়িয়াল খাঁ নদী ধরে ২০,০০০ পাইক, এক হাজার অশ্বারোহী, এবং ১০০ সামরিক নৌ-যান নিয়ে মুসা খানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন। প্রতাপাদিত্য তাঁর প্রতিজ্ঞা না রাখার কারণে, সুবাদার ইসলাম খান তার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আসন্ন আক্রমণের আশঙ্কায় তিনি আশিটি নৌযান নিয়ে তার কনিষ্ঠ পুত্র সংগ্রামাদিত্য কে সুবাদারের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু সুবাদার নৌযানগুলো গ্রহণ না করে ধ্বংসের নির্দেশ দেন।

প্রতাপাদিত্য আফগান বংশোদ্ভূত সৈনিক এবং ভাড়াটিয়া পর্তুগীজ সৈনিকদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি উদিত্যনারায়ন কে সলকা দুর্গ রক্ষার দায়িত্ব দেন। উদিত্যনারায়ণের সাথে ছিল জামাল খান নামে এক আফগান সেনাপতি। জামাল খান ছিলেন অশ্বারোহী এবং হস্তী বাহিনীর প্রধান। আর একজন আফগান ৫০০ নৌযানের একটি নৌবহর এর নেতৃত্ব দেন।

সলকার যুদ্ধ

মোঘলরা ১০০০ অশ্বারোহী হয় এবং ৫০০০ বন্দুকধারীর এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে। এই বাহিনীতে বেশ কিছু অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন যেমন, মির্জা মাক্কীহ, ইফতিকার খান, মির্জা সাইফুদ্দিন, শেখ ইসমাইল ফতেপুরী, সায়েক কয়সার এবং লাচ্মি রাজপুত। মুঘল পদাতিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন সুবাদার ইসলাম খানের ভ্রাতা গিয়াস খান ওরফে এনায়েত খান। একই সময় তার জামাতা বাকলার রাজা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযান প্রেরণ করা হয় যাতে তিনি বাকলা থেকে যশোরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে না পারেন। ১৬১১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুঘল বাহিনী ইছামতিএবং ভৈরব নদীর তীর ধরে যশোরের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে থাকে। দ্রুত তারা যমুনা এবং ইছামতি সঙ্গমস্থলে সলাকা নামক একটি স্থানে পৌঁছায়। মুঘল বাহিনীর সলকার দিকে অগ্রসর হলে উদিত্যনারায়ণ আচমকা তাদের উপর আক্রমণ করেন। মুঘল বাহিনী কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আফগান জামাল খান কে দুর্গের দায়িত্বে রেখে যান। যশোর বাহিনী মুঘল বাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করে। পরে গোলন্দাজ বাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে যশোর বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। খাজা কামাল নিহত হন। উদিত্য নারায়ণ পলায়ন করেন। জামাল খান তার হস্তী বাহিনী নিয়ে উদিত্য নারায়ণ কে অনুসরণ করেন।

খাগারঘাটের যুদ্ধ

প্রতাপাদিত্য দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এবারের যুদ্ধক্ষেত্র খাগড়াঘাট খাল এবং যমুনার সংগম স্থান। জনুয়ারি, ১৬১২ সালে মুঘল বাহিনী যশোর বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং তাদের দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থান নিতে বাধ্য করে। যশোর বাহিনীর বিপুল গোলাবর্ষণের মাধ্যমে মুঘল বাহিনীর অগ্রসরকে বাধা দেয়। কিন্তু এক অতর্কিত আক্রমণে মোগলবাহিনী দুর্গ দখল করে নেয়। প্রতাপাদিত্য বাধ্য হয়ে দুর্গের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে পালিয়ে যান। দ্বিতীয়বারের মতো পরাজয়ের পর প্রতাপাদিত্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। রাজা মান সিং লক্ষ্মীকান্ত কে সিংহাসনে বসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ভবানন্দ মজুমদার নামে প্রতাপাদিত্যের এক কর্মচারীকে সিংহাসনে বসানো হয়। পরবর্তীতে তিনি নদীয়া রাজপরিবারের পত্তন করেন।

প্রশাসন

রাজা প্রতাপাদিত্য একজন যোগ্য প্রশাসক ছিলেন। তার সময় দেশে আইনের শাসন বজায় ছিল। কবি ভারত চন্দ্র লিখেছিলেন-

‘যশোর নগর ধাম
প্রতাপ আদিত্য নাম
মহারাজা বঙ্গজ কায়সত্ম
নাহি মানে পাতশায়,
কেহ নাহি আটে তায়
ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ
বরপুত্র ভবানীর
প্রিয়তম পৃথিবীর
বায়ান্ন হাজার যার পল্লী
ষোড়শ হলকা হাতি
অযুত তুরঙ্গ সাতি
যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।’

প্রতাপাদিত্যের আমীর ওমরাহগনের মধ্যে সূর্যকান্ত ও শংকর প্রতিপত্তিশালী ছিলেন। সুপন্ডিত, ধীরস্থির কর্তব্যকাসার এবং ব্রাহ্মনোচিত প্রতিভা সম্পন্ন শংকর চক্রবর্তী রাজস্ব ও রাজ্য শাসনের ব্যাপারে পরিদর্শন করতেন। মহাযোদ্ধা, অসমসাহসী, সবশাস্ত্র বিশারদ এবং লোক পরিচালনে অদ্বিতীয়, ক্ষমতাশালী সূর্যকান্ত রাজত্বের প্রথম ভাগে রাজ্যের প্রধান সেনাপতি ছিলেন। তিনি সৈন্য রক্ষণ, যুদ্ধব্যবস্থা ও বলসঞ্চয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। শঙ্কর দেওয়ান ও মন্ত্রণা বিভাগের কর্তা এবং সূর্যকান্ত সৈন্যবিভাগের অধ্যক্ষ।

এলাকা

প্রতাপাদিত্যের রাজ্য বৃহত্তর ২৪ পরগনা, যশোর এবং খুলনা নিয়ে গঠিত ছিল। বর্তমান কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং ভোলাও তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথম পর্যায়ে প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল মুকুন্দপুর অঞ্চলে। পরবর্তীতে ধুমঘাটে বা ঈশ্বরীপুর অঞ্চলে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন তিনি। পরে ধুমঘাটেরই নাম হয় যশোহর।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দির

যশোরের পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন যশোরেশ্বরী । জনপ্রিয় কিংবদন্তীর মতে, এক সকালে রাজপরিবারের একজন সাধারণ কর্মকর্তা, কাছাকাছি একটি বন থেকে আলোকিত আলো আবিষ্কার করেছিলেন। যখন তাকে অবহিত করা হল, তখন তিনি আলোর উৎস অনুসন্ধানে যান। জঙ্গলের ভিতর গভীরে তিনি মা কালীর একটি মূর্তি খুঁজে পেয়েছিলেন, যা আলো নির্গত করছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে এটি পৃষ্ঠপোষক দেবতার মূর্তি, তাঁর রাজ্য ও তার জনগণের রক্ষাকর্তা। তাই তিনি মূর্তিটি তার রাজধানীতে নিয়ে এসে একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন যাতে সে উপাসনা করতে পারে।

সামরিক বাহিনী

প্রতাপ রাজনীতি বিশারদ ছিলেন। প্রতাপের রাজত্বকালে তিনি প্রয়োজন বুঝে নানা স্থানে দূর্গ নির্মাণ করেন। প্রতাপের দূর্গসমূহ পশ্চিমে হুগলী নদী থেকে পূর্বে বালেশ্বর নদী পর্যন্ত এলাকা জুড়ে ছিল। কিছু কিছু দূর্গের ভগ্নাবশেষ এখনো দেখতে পাওয়া যায়।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৪ টি দুর্গ ছিল যশোর, ধুমঘাট, রায়গর ,কমলাপুর, বেদকাশি, শিবসা, প্রতাপনগর, শালিখা, মাতলা, হায়দার গড়, আড়াই কাকি, মানি, রায়মঙ্গল এ অবস্থিত ছিল। সাতটি দুর্গ ছিল বর্তমান কলকাতায় অবস্থিত। স্থানগুলো হল, মাতলা, রায়গর, তালা, বেহালা, শালিকা, চিৎপুর এবং মুলাগড়।

প্রতাপ হিন্দুরাজা হয়েও পাঠান ও পর্তুগীজ সৈন্যরা যুদ্ধে অধিকতর দক্ষ ছিলেন বলে তাদের নিযুক্ত করতেন। প্রতাপের সেনাবাহিনীতে নয়টি ভাগ ছিল। প্রধান সেনাপতির অধীন এর প্রত্যেক বিভাগে পৃথক পৃথক সেনানী ছিল। সেনাবাহিনীতে ঢালি বা পদাতিক সৈন্য, অশ্বারোহী সৈন্য, তীরন্দাজ সৈন্য, গোলন্দাজ সৈন্য, নৌ সৈন্য, গুপ্ত সৈন্য, রক্ষী সৈন্য, হস্তী সৈন্য, পার্বত, কুকী সৈন্য, এই নয় বিভাগে বিভক্ত ছিল। যুদ্ধে ঢাল, তলোয়ার, শড়কী, বল্লম, লেজা, কামান, বন্দুক, বর্শা, তীর প্রভৃতি অস্ত্র শস্ত্র ব্যবহৃত হতো। প্রতাপের গোলন্দাজ বাহিনীর অধ্যক্ষ ছিলেন ফ্রান্সিসকো রড়া। নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন অগষ্টাস পেড্রো। সুখা নামক এক দুঃসাহসী বীর গুপ্ত বাহিনীর প্রধান ছিলেন। রক্ষী বাহিনীর প্রধান ছিলেন রত্নেশ্বর বা যজ্ঞেশ্বর নয়, বিজয় রাম ভক্ত চৌধুরী প্রমুখ। হস্তী সৈন্য বাহিনীর কোন অধ্যক্ষের নাম পাওয়া যায় না। পদাতিক বাহিনী প্রধানের নাম ছিল কালিদাস রায় এবং মদন মল্ল। ভারতচন্দ্র এর লেখা অনুসারে প্রতাপাদিত্যের সেনাবাহিনীতে ৫২০০০ ঢালী ছিল। অনেক কুকি সৈন্য ছিল। তাদের সেনাপতির নাম ছিল রঘু। অশ্বারোহী বাহিনীতে ১০ হাজার সৈন্য ছিল। যাদের সেনাপতি ছিলেন প্রতাপ সিংহ দত্ত। মহিউদ্দিন এবং নুরুল্লা ছিলেন তার সহকারী। তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান ছিলেন সুন্দর এবং ধুলিয়ান বেগ। ১৬০০ হাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও প্রতাপাদিত্যের একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী ছিল।

প্রতাপাদিত্যের সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য ছিলেন বাঙ্গালী কায়স্থ, রাজপুত, পর্তুগিজ সৈন্য এবং আফগান মুসলমান। বহু সংখ্যক আরকানিজ এবং কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত সৈন্য তার বাহিনীতে ছিল। তার বাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে ছিলেন জামাল খান গোত্র খানের পুত্র এবং খোজা কমল এরা সবাই আফগান মুসলমান ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ যার নাম ছিল রুদ্রদীত্য উপাধ্যায়। রুদ্রদীত্য ছিল তার ভ্রাতুষ্পুত্রী এর জামাতা।

নৌবাহিনী

বাংলার উপকণ্ঠে পর্তুগীজ জলদস্যু এবং আরাকান জলদস্যুদের ক্রমাগত আক্রমণের প্রেক্ষাপটে বাংলার কোন শাসকই একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করতে পারেননি। বারো ভূঁইয়াদের সবারই নিজস্ব নৌ বাহিনী ছিল। অধ্যাপক রাধা কুমুদ মুখার্জি এর পর্যালোচনায়,

তৎকালীন সময়ে বাংলার হিন্দুরা যাদের মূল নৌঘাঁটি অবস্থিত ছিল চান্দিখান এবং সাগরদ্বীপে। এ দুটি নৌঘাঁটি দুর্ধর্ষ রাজা প্রতাপাদিত্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অনেক যুদ্ধজাহাজ সর্বদা যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় থাকত। এছাড়াও আরও তিনটি স্থানে প্রতাপাদিত্যের শিপ ইয়ার্ড এবং ডকইয়ার্ড ছিল। সেই স্থানগুলি হল ধুবালি, জাহাজঘাটা, এবং চাকরাশি। সেখানে যুদ্ধ জাহাজ মেরামত এবং সংরক্ষণ করা হতো।

যুদ্ধ জাহাজগুলো সাধারনত সুন্দরবনের কাঠ দ্বারা নির্মিত হত। কিছু কিছু জাহাজে ৬৪টি দাড় থাকত। এসকল নৌযানের বেশিরভাগই কামান দ্বারা সজ্জিত থাকত। ওলান্দাজ ঐতিহাসিক জস গমানসের মতে সে সময় মুঘলদের নৌযানের সংখ্যা ছিল ৫০০টি। তখন রাজা প্রতাপাদিত্যের নৌযানে সংখ্যা ছিল তার প্রায় দ্বিগুণ। প্রতাপাদিত্যের নৌ-বাহিনী প্রথমে বাঙালি সেনাপতিদের অধীনে থাকলেও পরবর্তীতে পর্তুগিজ সেনাপতিদের হাতে এর নেতৃত্ব প্রদান করা হয়েছিল।প্রতাপাদিত্য নিম্নবঙ্গ ও সুন্দরবন অঞ্চলে নদীনালা ও খাল বিলের কথা বিবেচনা করে নৌশক্তি ও নৌবাহিনীর দিকে মনোনিবেশ করেন। দেশে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংস্থান, নদীর অবস্থা ও উপকূলের প্রকৃতি বিচার করে কাতরী নির্মাণ করেন। প্রতাপ বাহিনীর ব্যবহৃত দ্রুতগামী নৌকা সমূহের মধ্যে ছিল - ঘুরাব, বেপারী, কোশা, বলিয়া, পাল, মাচোয়া, পশতা, জালিয়া, পিয়ারা, মহলগিরি প্রভৃতি। এই সকল নৌকাসমূহের মধ্যে ঘুরাব সবচেয়ে শক্ত ও শক্তিশালী। তার সময়ে যশোরের কারিগরগণ জাহাজ নির্মাণে বিশেষত্বলাভ করেছিল। তৎকালে শায়েস্তা খাঁ যশোর হতে অনেক জাহাজ প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন। প্রতাপাদিত্যের উৎকৃষ্ট কাতরীর সংখ্যা সহস্রাধিক ছিল। ইসলাম খাঁর নবাবী আমলে আব্দুল লতীফ নামে একজন ভ্রমণকারীর বিবরন হতে জানা যায়, “প্রতাপাদিত্য বঙ্গদেশের শক্তিশালী রাজা। তাঁর যুদ্ধসামগ্রীতে পূর্ণ সাতশত নৌকা এবং বিশ হাজার পদাতিক সৈন্য ছিল এবং তার রাজ্যের আয় পনের লক্ষ টাকা।” কালীগঞ্জ - শ্যামনগর সড়কের পূর্ব পার্শ্বে মৌতলার নিকট তার জাহাজ ঘাটা কুআর বন নামক স্থানে জাহাজের পোতাশ্রয় ছিল। নিকটবর্তী দুদলিয়া গ্রামে ছিল তার কাতরী নির্মাণের ডক। জাহাজঘাটার নৌবিভাগের সর্বাধ্যক্ষ ফ্রেডারিক ডুডলির নামে একটি গ্রাম আছে। ডকের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন খাজা আব্দুল্লাহ এবং নৌসেনার অধ্যক্ষ ছিলেন অগাষ্টস পেড্রো।

মৃত্যু

খাগড়াঘাট যুদ্ধের পর মুঘলরা এক সন্ধি প্রস্তাব করে। মুঘলরা এই বিপুল যুদ্ধে জয়লাভ করলেও উভয় পক্ষের সেনারা ক্লান্ত এবং অবসন্ন ছিল। চুক্তিতে প্রতাপাদিত্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। প্রতাপাদিত্য গিয়াস খানের নিকট পরাজিত হবার পর তাকে শৃঙ্খলিত করে গিয়াস খান নিজে ইসলাম খানের দরবারে হাজির করেন। ঢাকায় তাকে আটক করে রাখা হয়। প্রতাপাদিত্যের জীবনের শেষ দিনগুলি সম্পর্কে খুব ভালো কোনো প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়নি। কিছু মুঘল দলিলে পাওয়া যায় যে তাকে বন্দি অবস্থায় দিল্লি নেয়ার পথে তিনি বেনারস থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাংলায় ফেরার পথে তিনি মারা যান। তেজস্বিতা, ধর্মনিষ্ঠা ও স্বাধীনতা স্থাপনের চেষ্টা প্রতাপকে এ অঞ্চলের লোকদের নিকটই শুধু নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের কাছে অমর করে রেখেছে।গুরম্নদেব রামদাস স্বামী তাই লিখেছেন-

বলিলে যে বঙ্গদেশী প্রতাপের কথা, শুন গুরম্নত্ব তার। তেজোবীর্য্যগুণে প্রতাপ প্রস্ত্তত ছিলো স্বাধীনতা লাভে, কিন্তু তা’র জাতি, দেশ না ছিল প্রস্তুত; জ্ঞাতিবন্ধু বহু তা’র ছিল প্রতিকূল, তাই হল ব্যর্থ চেষ্টা। মূঢ় সেই নর, দেশ, কাল , পাত্র মনে না করি’ বিচার, একা যে ছুটিতে চায়; চরণস্খলনে নাহি রহে কেহ ধরি’ উঠাইতে তারে।।
Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।