আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া
মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য । ০৩ মার্চ কুষ্টিয়াতে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ‌‌১৯৭১ এর ১৭ই এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা বৈদ্যনাথতলাতে (বর্তমান মেহেরপুরের মুজিবনগর) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেন। এই সরকারের নেতৃত্বেই নয় মাসব্যাপী বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। ১১ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ কুষ্টিয়া চূড়ান্তভাবে দখলদারমুক্ত হয়।

কুষ্টিয়ার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

কুষ্টিয়ায় ১০ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তাঁদের মধ্যে বীর উত্তম ২ জন, বীর বিক্রম ১ জন ও বীর প্রতীক ৭ জন।

বীর উত্তম ২ জন

  • শহীদ গ্রুপ ক্যাপ্টেন শরাফ উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম
  • শহীদ সিপাহী আবু তালেব বীর উত্তম

বীর বিক্রম ১ জন

  • শহীদ সাইফুল্লাহ খালেদ তারেক বীর বিক্রম

বীর প্রতীক ৭ জন

  • শহীদ দিদার আলী বীর প্রতীক
  • আব্দুল আলীম বীর প্রতীক
  • শহীদ মোঃ শামসুদ্দিন বীর প্রতীক
  • শহীদ কে. এম. রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক
  • শহীদ গোলাম ইয়াকুব আলী বীর প্রতীক
  • শহীদ হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক
  • মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ার হোসেন বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুষ্টিয়াতে প্রথম শহীদ হন রনি রহমান

স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়ার প্রথম শহীদের নাম রনি রহমান। ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পাক বাহিনীর গাড়ি বহরে হাত বোমা নিক্ষেপের প্রাক্কালে পাকিস্তানী সৈন্যের গুলিতে রনি রহমান শহীদ হন।

তাঁর জন্ম সাবেক বৃহত্তর রংপুর জেলার কুড়িগ্রামে, ১৯৪৯ সালের ১২ই নভেম্বর। তাঁর পিতা রংপুর জেলা স্কুলের শিক্ষক মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান, মাতা মরহুমা রহিমা খাতুন, তাঁরা ছয় ভাই-বোন। রনি ছিলেন সবার ছোট।

১৯৭০ সালে তিনি রংপুর সরকারী কলেজের বি,এ শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় সহপাঠী রুনু, জয়নাল, পোকাসহ আরো কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারীর রাতে রংপুর প্রেস ক্লাবে লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। এ খবর পাকিস্তানী শাসকদের কানে গেলে তাঁর নামে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। ৯ই ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে লোক মারফত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু নগদ টাকা ও কাপড় নিয়ে গোপনে বেরিয়ে পড়েন। এরপর খুলনা, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী বিভিন্ন জেলায় দূর্গত মানুষের ত্রাণ কাজে অংশ নিয়ে অবশেষে ১৭ই ডিসেম্বর কুষ্টিয়াতে সেজো বোন রুহ আফজার (ভগ্নিপতি মোঃ নজম উদ্দিন আহম্মদ) বাড়ি সদর উদ্দিন ম্যানশনে আসেন। এখানেও তিনি পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন।

২৫শে মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানী সৈন্য কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এরই প্রতিবাদে রনি রহমান প্রতিশোধ নিতে রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগারের তালা ভেঙ্গে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে তা দিয়ে হাতবোমা তৈরী করেন। তিনি খবর পেয়েছিলেন পাকিস্তানিরা এন.এস. রোড দিয়ে যাতায়াত করে। তাদের আক্রমণ করতে পরদিন ২৭শে মার্চ সকাল ১০টার দিকে বন্ধু আব্দুল জলিল, কমর উদ্দিন, সামসুল হাদী, মতিউর রহমান মতি, রাজা, আনিস, হোসেন সহ কয়েকজনকে নিয়ে তিনি নিজামতুল্লাহ সংসদের নিচে সমবেত হন। সকলকে নিচে রেখে তিনি নিজামতুল্লাহ সংসদের ছাদে উঠে বোমা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে পাক বাহিনীর গাড়ি এগিয়ে আসতে থাকে। হঠাৎ মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেটের ছাদ থেকে একজন ৮/১০ বছরের ছেলে গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। কয়েকজন সৈনিক ভবনটির ছাদে উঠে পড়ে এবং ঢিল নিক্ষেপকারীকে খুঁজতে থাকে। এ সময় তারা বোমা নিক্ষেপে উদ্যত রনি রহমানকে দেখে ফেলে এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। সৈনিকদের একটি গুলি তাঁর মাথায় বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁর লাশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার পৌর গোরস্থানে রনি রহমানকে দাফন করা হয়।

রনি রহমানের শহীদ হওয়ার খবর তার বাড়িতে পৌঁছেছিল পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বুলেটিনের মাধ্যমে। যে মূহুর্তে তাঁর মৃত্যু সংবাদ বলা হচ্ছিল তখন তাঁর মা ভাত খাচ্ছিলেন। পরিবারের অন্যান্য যারা বেতার শুনছিলেন তখনই বেতার বন্ধ করে দেন। মায়ের কাছে অপ্রকাশিতই থেকে যায় রনি রহমানের শাহাদৎ বরণের কথা। ঘটনাটি জানা গেছে রনি রহমানের বড় ভাই দেওয়ান মাসুদুর রহমানের কাছ থেকে। তিনি আরো বলেন, ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা যখন তার মাকে সালাম করছিল তাদের ভিড়ে তিনি রনিকে খুঁজছিলেন। এমন সময় রনির মৃত্যু সংবাদ তাকে জানানো হলে তিনি শোকাতুর হয়ে অনেক দিন কেঁদেছিলেন।

প্রতি বছর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় কুষ্টিয়াবাসী দিনটি পালন করে থাকে।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।