খন্দকার সামসুল আলম দুদু - বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পত্রিকা ‘স্বাধীন বাংলা’ প্রকাশ করেন
খন্দকার সামসুল আলম দুদু - বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পত্রিকা ‘স্বাধীন বাংলা’ প্রকাশ করেন

খন্দকার সামসুল আলম দুদু ১৯৪২ সালের ১৭ই আগষ্ট, কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার হরিনারায়নপুর ইউনিয়নের আব্দালপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেন। বাবা – মৃত খন্দকার কে আহমেদ, মাতা – মৃত ছারা খাতুন, ৫ ভাই ৩ বোন। ভাই বোনদের মধ্যে তিনি ৪র্থ । ভাইদের মধ্যে তৃতীয়।

প্রাথমিক স্কুল আব্দালপুর, পরে কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়া মসজিদবাড়ী বাইলেন প্রাথমিক স্কুলে এবং পরে মুসলিম হাই স্কুলে নবম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ে ঢাকা থেকে ম্যট্রিক পাশ করেন। প্রথমে ঢাকার একটি কলেজ এবং পরে কুষ্টিয়া কলেজে। কুষ্টিয়া কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন।

তিনি কুষ্টিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের ১৯৬৩ সালে নির্বাচিত ভি পি ছিলেন এবং সেই সাথে ১৯৬৩ সালে কুষ্টিয়া জেলা [ পুর্ব পাকিস্থান ] ছাত্র লীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম,এ তে ভর্তি হন এবং ইকবাল হলের Residence ছাত্র [ জহুরুল হক হল ] এ ছিলেন। মাষ্টার্স পড়ার পর এল,এল,বি তে ভর্তি হন ও পরে ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইন ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তদানিন্তন পাকিস্তান ভ্রমন করেন। পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে ও প্রধান প্রধান এলাকা যেমন – মারী, করাচী, পেশোয়ার, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর সহ প্রধান প্রধান এলাকা ভ্রমন করেন।

ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতি মহলে পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। পরে আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে পড়েন। তিনি আওয়ামী লীগের বৃহত্তর [ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ] জেলার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বিহারে ও চাকুলিয়া তিনি উচ্চতর ট্রেনিং গ্রহন করেন এবং চাকুলিয়া ৬ নং ইউনিটের ৩ নং ব্যাচের উইং লিডার ছিলেন।

যুদ্ধের সময় নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে বাংলাদেশের সর্বোপ্রথম পত্রিকা ‘স্বাধীন বাংলা’ প্রকাশ করেন যা যুদ্ধের সময় বহুল প্রচারিত ছিলো। এর সাথে অনেকেই জড়িত ছিলেন। জনাব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, এ্যাডঃ লিয়াকত আলী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন এছাড়াও আরো অনেকেই জড়িত ছিলেন।

তিনি কৈশোর থেকেই খেলাধুলার সাথে জড়িত। তিনি কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন। যাযাবর ফুটবল ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ও খেলোয়াড় ছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন সময়ে কে,ডি,এস এর সম্পাদক ছিলেন। তার সময়ে খেলাধুলার প্রভুত উন্নয়ন সাধিত হয়। তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ছিলেন দীর্ঘকাল এবং N,S,C,B ক্রীড়া পরিষদের সদস্য ছিলেন। খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্যের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিলো।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি সারা বাংলাদেশে বহুল পরিচিত। তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সভাপতি, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবি পরিষদের এখন সভাপতি আছেন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য।

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প স্থাপনে সক্রিয় ভাবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন। ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নানা ভাবে এ দেশের সকলকে সংগঠিত করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি দেশ পুনঃগঠনের কাজে দারুনভাবে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নে এক ডেলিগেশনে প্রেরন করেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেন এবং দেশে ফিরে দেশের ও সমাজের কল্যানে আত্তনিয়োগ করেন।

বঙ্গবন্ধুর মৃতুর পর তিনি দীর্ঘকাল কারাগারে ছিলেন এবং কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে দলকে সংগঠিত করেন। নানা সমস্যা ও প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্ষিত বাকশালের রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।

বাংলার দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হলে বাকশালই সঠিক পথ ও মত বলে তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি আরো বিশ্বাস করেন ব্যাক্তির ও দলের চেয়ে আদর্শ নীতিই মুখ্য। কোন পদ ছাড়াও মানুষ ও সমাজকে সেবা করা যায়। লোভ লালসার উর্দ্ধে যেতে না পারলে সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসা যায় না। দেশের মানুষের কল্যানে নিজেদের ত্যাগী হতে হবে।

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য