আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

হিরন্ময় স্বপ্নের এক মুক্তিযোদ্ধা – মোহাম্মদ মোকাদ্দেশ হোসেন
হিরন্ময় স্বপ্নের এক মুক্তিযোদ্ধা – মোহাম্মদ মোকাদ্দেশ হোসেন

কুষ্টিয়া জেলা ১৮ ও ১৯ শতকে সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাউল সম্রাট লালন ফকির ও বিচারপতি রাধা বিনোধ পালের জন্য ইতিহাসব্যাপী প্রখ্যাতি অর্জন করেছিল। এই অর্জন আরো সম্প্রসারিত হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়া শহরের নিয়ন্ত্রন গ্রহন করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সামরিক সরকার প্রধান ইয়াহিয়া খান কতৃক উপেক্ষার পটভূমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আকস্মিক শহর দখলের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে গ্রামগঞ্জের আন্দোলনরত সর্বস্তরের স্বাধীনতা পিপাসু জনগণের সহায়তায় কুষ্টিয়া শহরবাসী ২৯শে মার্চ গভীর রাতে বাঙালি ইপিআর সদস্যের নেতৃত্বে পুলিশ লাইন, জেলা হাইস্কুল, টেলিফোন ও ওয়্যারলেস ভবন আক্রমণ করেন। বিমান বাহিনীর সহায়তা সত্ত্বেও লাখো জনতার জয় বাংলা শ্লোগানের মুখে মাত্র ৪৮ ঘন্টার প্রতিরোধের মুখে ভেঙ্গে পড়ে হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা। নয়া উপনিবেশ থেকে বাঙ্গালির মুক্তির প্রত্যাশা প্রাধান্য পায় রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধে। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই বীরোচিত প্রতিরোধে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যে কয়েকজন সরকারি অফিসার ও বেসরকারী সংগঠক জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন তাঁদের অনেকের মধ্যে আবু ওসমান চৌধুরী, এ আর আজম চৌধুরী, তৌফিক এলাহি চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন, মাহফুজ উস ছোবহান, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সামসুল হক, ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ এমএ হাফিজ, আজিজুর রহমান আককাস(এমপি), আব্দুর রউফ চৌধুরী(এমপি), জহিরুল হক (রাজা মিয়া) এমপি, গোলাম কিবরিয়া এমপি, আহসান উল্লাহ এমপি, আইনুল হক, মীর আবদুল জলিল, আককাস আলী মঞ্জু, খঃ সামসুল আলম দুদু, মুছা মিয়া, কামরুল ইসলাম সিদ্দিক, এমএ বারী, আব্দুল হামিদ রায়হান, আব্দুল আজিজ মিয়া, ডাঃ আব্দুল মান্নান, ডাক্তার তোফাজ্জল হক প্রমুখ।

bangladesh-war-staff
হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই বীরোচিত প্রতিরোধে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যে কয়েকজন সরকারি অফিসার ও বেসরকারী সংগঠক জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন তাঁদের কিছু ছবি।
Pakistan army destroyed the personal library of mokaddesh hossain
Pakistan army destroyed the personal library of mokaddesh hossain

১৫ই এপ্রিল পযন্ত কুষ্টিয়া পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কব্জা থেকে মুক্ত ছিল। চরম ধ্বংসযজ্ঞের সড়ক দিয়ে তাঁরা পুনরায় দখল করে কুষ্টিয়া শহর। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মিঃ কারগিলের ভাষায় ধ্বংসের ভয়াবহতা হিরোসিমা-নাগাসাকির দুর্ভাগ্যর কাহিনী নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয় ইতিহাস মনস্ক জনগণকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগনের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দেন বাংলাদেশের সর্বাঙ্গে। মুজিবনগরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিনের আহমদের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকার গঠনের অব্যবহিত পরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব। গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজনে বাংলার দামাল ছেলেরা আশ্রয় গ্রহণ করেন গ্রামগঞ্জে। শহর থেকে দূরের জনপদে গড়ে উঠে বেশ কয়েকটি প্রতিরোধ দুর্গ। কুষ্টিয়া জেলার বাঁশগ্রাম ছিল এমন একটি দুর্গ। বহুগুনে ঋণী মোঃ মোকাদ্দেশ ছিলেন এ দুর্গের মালিক। তাঁর দ্বিতল বাসভবনে দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকতেন একদল চৌকস মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার খালেকের হুমকির মুখে বর্ষীয়ান অঞ্চল প্রধান মোকাদ্দেশ হোসেন অব্যাহত রাখেন মুক্তিযুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম। এ সংবাদ পৌঁছে যায় কুষ্টিয়া শহরের অবস্থিত হানাদার বাহিনীর দপ্তরে।

৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালের সকাল বেলা হানাদার বাহিনীর একটি অগ্রবর্তী প্লাটুন অবস্তান গ্রহণ করে বাঁশগ্রাম সন্নিকটস্থ বংশিতলায়। সম্মুখ যুদ্ধের অবতারণা ঘটে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরোচিত প্রতিরোধের ফলে। ভয়ানক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সম্মুখ এ যুদ্ধে তাজু, দিদার, ইয়াকুব, খুরশিদ আলম দিল, চাঁদ আলী, সাজান আলী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মান্নান, কিয়ামুদ্দিন, মোবারক হোসেন, আবু দাউদ সহ ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন।

হানাদার বাহিনী এ পরাজয় কোনমতেই মেনে নিতে পারেনি পদাতিক যুদ্ধের নিয়মে। জবাবে তাঁরা ৯ই সেপ্টেম্বর বাঁশগ্রাম অপারেশনের নামে স্থানীয় রাজাকার সমবিহারে মো মোকাদ্দেশ হোসেনের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে। এ অগ্নি সংযোগে ভস্মীভূত হয়ে যায় শতাব্দীব্যাপী সংগৃহিত বই পুস্তকসহ অনেক মূল্যবান সম্পদ। উপরন্তু দৈহিক নির্যাতনের শিকার হন মোকাদ্দেশ হোসেন ও তদীয় ছোট ভাই কবি আবুল ফজল মোহাম্মদ মুত্তালিব। মোকাদ্দেশ হোসেনের অপরাধ তিনি প্রথমত “মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন এমএ বারীর বাবা, দ্বিতীয়ত এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা”। মোহাম্মদ মুত্তালিব পেশাগতভাবে ডাক্তার। অসুস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি সেবা করেন। হানাদার বাহিনীর চোখে এই সেবা মারাত্মক অপরাধ। বর্ণিত অগ্নি সংযোগের আগে ও পরে মোকাদ্দেশ হোসেনের বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনকে হানাদার বাহিনী ও তাঁদের দোসর রাজাকার-আলবদর নির্মমভাবে হত্যা করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে মোকাদ্দেশ সাহেব ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রাথী শাহ আজিজের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের প্রাথী সৈয়দ আলতাফ হোসেনকে সমর্থন করায় মুসলিম লীগের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় মোঃ মোকাদ্দেশ হোসেনকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিনয়ের সাথে সে আর্থিক সাহায্য গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। এ ঘটনাটি জাতির জনককে অভিভূত করেছিলো। তিনি এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলী সাহেবকে বলেছিলেন যে, “I don’t find any difference between SK. Lutfor Rahman and M. Mokaddes Hossain.” মোকাদ্দেশ হোসেন গ্রামের বাড়ীতে জাতীয় শোকদিবস পালনে কোরআন খতম ছাড়াও গরিবদের জন্য খানার এন্তেজাম করতেন। মোঃ মোকাদ্দেশ হোসেন একটি ঘুমন্ত সমাজকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপহার দিয়েছেন। নানান সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূল অবস্থা উপেক্ষা করে তাঁর অঞ্চলে যে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রমাণ বিদ্যুৎ, পাকা সড়ক, গ্রোথ সেন্টার ভিত্তিক হাটবাজার, ইউনিয়ন হাঁসপাতাল, বণিক সমিতি ভবন, স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প, জনতা ব্যাংকের শাখা, মাদ্রাসা, হাইস্কুল ও ডিগ্রি কলেজ। জীবন সায়াহ্নে তিনি ঘটনাবহুল বসতবাড়ি ভবিষ্যতের মালিকানা কলহ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষে গণমুখী ট্রাষ্টের আওতায় নিবন্ধন করেন। তিনি যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গেছেন তাঁর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর এবং পূর্ণাজ্ঞ একটি হাঁসপাতাল অন্যতম।

নীলিমায় মুক্তিযোদ্ধের স্বপ্ন বলাকা
Unbounded dream of a freedom fighter
Dr. Shazly Bari Sarah & Dr. Sadaf Bari Pinky
উক্ত বই হতে সংগৃত

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।