শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী
শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী

শামসুল হাদী (জন্মঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, মৃত্যুঃ ১১ মে ১৯৭৫)। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। কুষ্টিয়া জেলার ১২টি থানাতেই যুদ্ধে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রত্যক্ষভাবে পঞ্চাশটির অধিক যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন।

শামসুল হাদী ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পুরাতন কুষ্টিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুল ইসলাম দশম শ্রেণীতে ছাত্র থাকাকালে স্বদেশী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরন করেছিলেন। ফলে লেখাপড়া করতে পারেননি। পরবর্তি জীবনে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। শামসুল হাদীর ছোট চাচা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নেতৃত্তে স্বদেশী আন্দোলনের যোদ্ধা হিসেবে ট্রেনিং নিয়েছিলো।

শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী

হাদীর মেজ চাচা বৃটিশ আমলের শেষের দিকে দারোগার চাকুরীতে ছিলো। শামসুল হাদীর দাদা নাজিমুদ্দিন শেখ একজন দর্শনধারী পুরুষ ছিলো। শামসুল হাদীর সাত ভাই দুই বোন। মহান মুক্তিযুদ্ধে হাদীরা ছয় ভাই ট্রেনিং নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। মেজ ভাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলো এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটক ছিলো।

শামসুল হাদী স্কুলে ছাত্র থাকাকালে তাকে নিউক্লিয়াসের সদস্য করা হয়। কুষ্টিয়া জেলায় নিউক্লিয়াসের ৭ জন সদস্য ছিলো। তার মধ্যে সে অন্যতম। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলো। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনের পর ৩রা মার্চ সকালে শামসুল হাদীর মা নিজ হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা কুষ্টিয়াতে সর্বোপ্রথম উত্তোলন করেন। ( কুষ্টিয়ার ডিসি মোফাজ্জেল করিমের দুই যুবক প্রবন্ধে উল্লেখ আছে ) এবং তার ছয় ছেলেকেই মুক্তিযুদ্ধে উৎসর্গ করেন। মায়ের নির্দেশে তার পুত্ররা কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেনি। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে এক বিশাল সমাবেশে কুস্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জলিল স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন এবং শামসুল হাদী স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ করেন।

ওই দিন ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে কুষ্টিয়া হাই স্কুলের মাঠে জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজে হাদী স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। গোলাম কিবরিয়া এম,পি জয়বাংলা বাহিনীর সালাম গ্রহন করে। মারফত আলী স্যালুট প্রদান করে। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাদীর বাড়ী গান পাউডার দিয়ে ধুলোয় মিশিয়ে দেয় এবং রক্ষী বাহিনী তার বাড়ী ঘর ভেংগে দেয়। শামসুল হাদী কুষ্টিয়াতে জাসদ প্রতিষ্ঠা করে এবং কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭৫ সালের ১১ মে দৌলতপুর থানায় ছাতারপাড়ায় রক্ষী বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য