আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

সৃষ্টিশীল কারিগর কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন
সৃষ্টিশীল কারিগর কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন

রবিউল হুসাইন (জন্মঃ ৩১ জানুয়ারি ১৯৪৩ সাল - মৃত্যুঃ ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ সাল ইংরেজি) সৃষ্টিশীল কারিগর তিনি একাধারে কবি, স্থপতি, শিল্প-সমালোচক, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক। লেখালেখির পাশাপাশি এই মহান গুণীব্যক্তি জীবনের সবটুকু সময় দেশ ও মানব কল্যাণে উৎসর্গ করে গেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃত সবুজ পটভূমিকায় রক্তাভ যে শহীদ মিনার সেটি আমাদের জাতীয় পতাকা তথা বাংলাদেশের মর্মমূলেরই প্রতীকীরূপ। ওই স্থাপত্যকর্মটির নকশা করেছেন স্থপতি রবিউল হুসাইন।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদান রাখায় ২০১৮ সালে একুশে পদক পান। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, আইএবি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষকও ছিলেন।

সৃষ্টিকর্মের পাশাপাশি তিনি নিজেকে সবসময় সততা, নম্রতা ও আদর্শের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে তোলেন। পেশা স্থাপত্যশিল্প হলেও সম্পৃক্ততা ছিল বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। নিজেকে স্থপতি হওয়ার পাশাপাশি ষাটের দশক থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাড়াও ষাটের দশকে বিভিন্ন ছোট কাগজে লেখালেখি করতেন। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও শিশুতোষ গোটা পঁচিশেক বইয়ের লেখক তিনি। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- ‘বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি’, ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘গল্পগাথা’, ‘ছড়িয়ে দিলাম ছড়াগুলি’, ‘দুরন্ত কিশোর’, ‘কী আছে এই অন্ধকারের গভীরে’, ‘আরও ঊনত্রিশটি চাঁদ’, ‘স্থিরবিন্দুর মোহন সংকট’, ‘কর্পূরের ডানাঅলা পাখি’, ‘আমগ্ন কাটাকুটি খেলা’, ‘বিষুবরেখা’, ‘দুর্দান্ত’, ‘অমনিবাস’, ‘কবিতাপুঞ্জ’, ‘স্বপ্নের সাহসী মানুষেরা’, ‘যে নদী রাত্রির’, ‘এইসব নীল অপমান’, ‘অপ্রয়োজনীয় প্রবন্ধ’ ইত্যাদি।

রবিউল হুসাইন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচকসহ বিভিন্ন সংস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

তাঁর সৃষ্টি এমন অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন নকশা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ (নীলক্ষেত অংশে) ডিজাইন তার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট, কিছু বিল্ডিং, ভাসানি হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল, দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার, কিছু কিছু হাউজিং ও একাডেমিক বিল্ডিং ডিজাইন তার হাতেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্সও তিনিই করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স স্থপতি রবিউল হুসাইনের। দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট, বিকেএসপি, দিনাজপুরের এইট লেন্থ সুইমিং পুলসহ কমপ্লেক্স করেছেন। সাভার বিকেএসপির শুটিং রেঞ্জের ডিজাইন করেছেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটির ডিজাইন তার। তিনটা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ডিজাইনও তাঁর হাতে গড়া।

রবিউল হুসাইনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপার রতিডাঙ্গা গ্রামে। কুষ্টিয়া শহরে স্কুল ও কলেজ জীবন শেষে বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিপত্নীক ছিলেন। তার একমাত্র সন্তান রবিন হুসাইন। নিজের জন্য কখনো না ভেবে দেশের উন্নয়নে সবসময় কাজ করে গেছেন।

স্বাভাবিক জীবন চক্রে হঠাৎ এই গুণীব্যক্তি ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চির বিদায় নেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আগামী প্রজন্মের নিকট চির অম্লান হয়ে থাকবে।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.