আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

গড়াই জন্মস্থানে গৌড়ী বলে পরিচিত
গড়াই জন্মস্থানে গৌড়ী বলে পরিচিত

গড়াই জন্মস্থানে গৌড়ী বলে পরিচিত। গড়াইয়ের প্রথম জন্ম কুষ্টিয়ার আমলা সদরপুরের বিল হতে। গড়াই জয়নাবাদ লাহিনী পাড়ার সাঁওতার পূর্বদিকে কুমারখালি, খোকসা, হিজলাবাদ, জালসুকা, লাঙ্গলবন্দ, আমলাসার, তারাউজল হয়ে ক্রমে দক্ষিণ দিকে নারুয়া সমাধিনগর কামারখালির দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে মধুমতি, এলানজানি, বালেশ্বররূপে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

কুষ্টিয়ার কুড়িদহ, পাতিলাদাহ, চেঁচানেরদহ, ডাকদহ এ কয়টি নামের সাথে গড়াই নদীর জন্মের পৌরানিক কাহিনী আছে। কথিত আছে কুষ্টিয়ার আমলা গ্রামের বিলের পাশে ছিল এক ব্রাহ্মণ। এই ব্রাহ্মণের এক সেবাদাসী ছিল। নাম তার গৌড়া। ব্রাহ্মণ একদিন ৬ মাইল দূরে কুপদহে গঙ্গাস্নানে যাবেন। একথা জানতে পেরে গৌড়ি গঙ্গা মাকে নিবেদন দেবার জন্য একটি ফুল দেন। ব্রাহ্মণ যথাসময়ে গঙ্গাস্নান সেরে ফিরে আসতে মনে পড়ে গৌড়ির নিবেদন দিতে তিনি ভুলে গেছেন। ব্রাহ্মণ ফিরে যেতে চান গঙ্গায় এবং কিছুদূর যেতে গরুর খুরে গর্তের জমা পানি দেখে মনে করেন এখানেই নিবেদন দিয়ে যাই, কে আর দেখছে? সেখানে ফুলটি দিতেই মা গঙ্গা নিজে হাত বাড়িয়ে তা গ্রহন করেন। এতে বিস্মিত হয়ে ব্রাহ্মণ ভাবে গৌড়ি সাধারণ মেয়ে নয়।

বাড়ি ফিরে তিনি গৌড়ির পা জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। তার স্ত্রী এর কারণ জিজ্ঞেস করার মুহুর্তেই গৌড়ি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই নুড়ি ও পাতিল নিয়ে দূরে প্রস্থান করতে থাকে। ব্রাহ্মণ তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকলেও গৌড়ী সমান দূরত্ব রেখে চলতে এবং ব্রাহ্মণ লক্ষ্য করে বিলের পানি উপচিয়ে গৌড়ীর পিছনে ছুটছে। এভাবে গৌড়ীর পথে নদীর সৃষ্টি হয় এবং গৌড়ী হারিয়ে যায়। গৌড়ী যেখানে নুড়ি ফেলে সেখানে নুড়িদহ, যেখানে হাতের পাতিল ফেলে সেখানে পাতিলাদহ আবার ব্রাহ্মণ যেখানে তাকে পিছন থেকে ডাকেন সেখানে ডাকদহ এবং যেখানে চেঁচিয়ে ডাকেন সেখানে চেঁচানোরদহ বলা হয়। এটা নিছক লোককাহিনী তবে কুষ্টিয়ার বর্তমান এসব দহগুলি স্মরণ করিয়ে দেয় গৌড়ী বা গড়াই নদী এসব স্থান দিয়ে একসময় প্রবাহিত হত। গড়াই একসময় অত্যন্ত বেগবান এবং অনেক প্রশস্ত নদী ছিল। ত্রয়োদশ চতুর্দশ শতকে নদীটির প্রবাহ বর্তমান পথে ছিল না। এ নদীটি তখন বর্তমান প্রবাহ থেকে ৪/৫ মাইল উত্তর দিয়ে প্রবাহিত হত।

প্রমাণ হিসেবে বলা যায় বর্তমান সিরাজপুরের হওর (পাংশা থানার দক্ষিণে কসবা মাঝাইলের পাশ দিয়ে) প্রাচীন গড়াইয়ের পরিত্যক্ত কোল, যদিও তা গড়াই থেকে উঠে গড়াইতে মিশেছে। সিরাজপুরের হাওড় গড়াইয়ের পুরাতন ধারা। এ ছাড়া সিরাজপুরের হাওর থেকে উৎসারিত চত্রা নদীটি নাড়ুয়ার ঘাটে আবার গড়াইতে মিশেছে তা নদীটির পূর্বতন ক্ষীণ প্রবাহ। প্রাচীন গড়াই সিরাজপুরের হাওর থেকে সোজা বর্তমান প্রবাহের ২/৩ মাইল উত্তর দিয়ে ঘি কমলা চষাবিলা হয়ে পূর্ব মুখে তখন বালিয়াকান্দির পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হত।

নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে এর প্রাচীন প্রবাহ তেঢালা, পাকুরিয়া, কাছমিয়া বিলে পরিণত হয়েছে। বর্তমান এলাঙ্গী, তেকাটি হয়ে যে ভাটিখাল প্রবাহিত তা প্রাচীন গড়াই নদীর প্রবাহ। মদনডাঙ্গী, বাদশাডাঙ্গী মূলত গড়াইয়ের ডাঙ্গী বা চর। ১৫/২০ বছর পূর্বেও গড়াইয়ের প্রবাহ অতি প্রবল ছিল। প্রচুর ইলিশ মাছ এ নদীতে ধরা পড়ত এবং সে ইলিশের স্বাদই ছিল আলাদা। ৪০/৫০ বৎসর পূর্বে গড়াইয়ের নাড়ুয়া ঘাটে কুমিরের উপদ্রব ছিল। গড়াইয়ের পথে একসময় এ অঞ্চলের ব্যবসার প্রসার লাভ করে। বালিয়াকান্দি, সমাধিনগর, নাড়ুয়া, মৃগী, পাংশার পাট, পিঁয়াজ, রসুন, তিল ও অন্যান্য শস্য এ পথে কলিকাতা, খুলনা চালান দেওয়া হত।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ- রাজবাড়ি সাইবার রিসার্চ ইনষ্টিটিউট - প্রফেসর মতিয়ার রহমান বেড়াডাঙ্গা-১, রাজবাড়ি

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.