আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

১৮ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী মুক্ত দিবস
১৮ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী মুক্ত দিবস

রাজবাড়ী শহর মূলত রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এখানে ১৫-২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। পাকিস্তান আমলে এদের প্রচণ্ড দাপট ছিলো। পুরো রেলই ছিলো তাদের দখলে।

রাজবাড়ীতে পাকিস্তানিদের দোসর অবাঙালি বিহারীরা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে ওঠে। পুরো শহর দখল করে রাখে তারা। ৯ ডিসেম্বর শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকায় বিহারীদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিহারীদের গুলিতে সেদিন মুক্তিযোদ্ধা রফিক, শফিক ও সাদিক শহীদ হন।

বিহারীরা ১৩ ডিসেম্বর শহরের বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রহরীকে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর প্রায় সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পন করলেও রাজবাড়ী শহর তখনও অবাঙালি বিহারীদের আয়ত্তে। তারা ঘোষণা দেয়, সারাদেশ বাংলাদেশ হলেও রাজবাড়ী পাকিস্তান হয়ে থাকবে।

এ সময় জেলার সব অঞ্চল থেকে মুক্তি বাহিনীর বিভিন্ন দল রাজবাড়ীতে যুদ্ধের উদ্দেশে সংগঠিত হতে থাকেন। ইতোমধ্যে শহিদুন্নবী আলম, ইলিয়াস মিয়া, সিরাজ আহম্মেদ, আবুল হাসেম বাকাউল, কামরুল হাসান লালী, রফিকুল ইসলামের কমান্ডে মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিকে ঘিরে রাখে। এদের সঙ্গে জেলার পাংশা থেকে জিল্লুল হাকিম, আব্দুল মতিন, নাসিরুল হক সাবু, আব্দুল মালেক, সাচ্চু, আব্দুর রব তাদের দল নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন।

বিহারীরা শহরের রেল লাইনের উত্তর পাশে অবস্থান নেয়। তারা রেলওয়ে লোকোসেড থেকে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত রেলের মালগাড়ী দিয়ে বাধা তৈরি করে।

পাক বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও পোড়াও ও গণহত্যা।

১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল বুধবার, পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম পর্যায়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট আক্রমণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ দিন পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। সেদিন সকালে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ২৫ জন শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।

আরিচা থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর চিমারের নেতৃত্বে ‘রণবহর’ নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক বাহিনী। তারা তিনটি স্টিমার (সুসজ্জিত অস্ত্রসহ), দু’টি গানবোর্ট (নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ), একটি গোমতী ফেরিসহ (অবাঙালি প্যারা মেলেটারি) তিনটি লঞ্চ, দু’টি হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টসহ প্রস্তুতি গ্রহণ করে ভোর ৪টার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ফজরের সময় ঘুমন্ত গোয়ালন্দবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মো. আব্দুস সামাদ মোল্লা জানান, পাক বাহিনী যাতে রাজবাড়ী শহরে তাদের সাজোয়া যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য রাজবাড়ীর-ফরিদপুর সড়কের আহল্লাদীপুর ব্রিজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তি বাহিনীরা সমবেত হয়। এসময় পাক বাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়।

যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশি শহীদ হন। তিনিই রাজবাড়ীর প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী তখনও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর বিহারীদের হাতে ছিলো অবরুদ্ধ।

১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারীদের চলে তুমুল যুদ্ধ। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয়। উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ নিজাম মন্টু জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে তারা আপন সাত ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন জানান, রাজবাড়ী মূলত রেলওয়ে অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ১৫/২০ হাজার বিহারীদের বসবাস ছিলো। তারা পাক বাহিনীর সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জ থেকে যুবকদের ধরে এনে লোকোশেডে হত্যা করে কূপের মধ্যে ফেলো দিতো। বিহারীরা তাদের অত্যাচার, জুলুম ও তাদের সমস্ত অপকর্মের কথা চিন্তা করে বুঝতে পারে, তাদের অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। তাই তারা আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হলেও রাজবাড়ীতে তখনও যুদ্ধ চলছিল। পরে ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় রাজবাড়ী।

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.