আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে প্রবিত্র রমজান মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

মুক্তিযুদ্ধের নীরব সাক্ষী কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা
মুক্তিযুদ্ধের নীরব সাক্ষী কুষ্টিয়ার দুর্বাচারা

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বর্বর পাক বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে অতি বিরল। এ স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালীকে হারাতে হয়েছে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রব আর অপরিমিত ধন সম্পদ। তবু এক বুক রক্তের বিনিময়ে বাঙালী পেয়েছে রক্তিম স্বাধীনতা। তাই বাংলার মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর নির্যাতিত ও পরাধীনতার গ্লানিতে দগ্ধ মুক্তিপাগল মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত হয়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের আবির্ভাব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনরায় পরনির্ভর করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত রয়েছে এখনও! মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদররা পদে পদে সে অপতৎপরতাই চালাচ্ছে। তবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় জনগণ এখন আশাবাদী। বিগত নির্বাচনে দেশের জনগণ বিপুল রায় দিয়ে আস্থা রেখেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ওপর। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এবার শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্তরালে থেকে যাওয়া এলাকার জনগণ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে যে তাদের মূল্যায়ন হবে। এটা ধ্রম্নব সত্য যে, স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতি হিসেবে আমরা কাঙ্ৰিত লৰ্যে নোঙর ফেলতে পারিনি। এর অন্যতম মূল কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়া এবং দুর্নীতির কালো ছায়া। এখনও অনেক নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকা রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের অবদান অসামান্য। খবরের অনত্মরালে থাকা তেমনই এক জনপদ নিয়ে এই প্রচেষ্টা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার রয়েছে গৌরবময় অবদান। মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন এর উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়ার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। তেমনি এক জনপদ ঐতিহ্যবাহী দুর্বাচারা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামের যুবকরা দেশমাত্রিকার জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, চার দশক পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের অমস্নান স্মৃতি বহনকারী এলাকাটি এখনও প্রচারের বাইরেই রয়ে গেছে! সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে ওই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে অনেক অজানা তথ্য। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ার বংশীতলার যুদ্ধ ছিল অন্যতম। যুদ্ধস্থান হওয়ায় সবসময় বংশীতলা আলোচিত হয়েছে বেশি। কিন্তু এর পেছনে ছিল দুর্বাচারা অঞ্চলের যুবকদের অবিস্মরণীয় কীর্তি। মূলত ওই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ যোদ্ধাদের নিয়েই বংশীতলা যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেসময় বংশীতলা যুদ্ধের সমস্থ কর্ম-পরিচালিত হয়েছে দুর্বাচারা থেকে। ৫ সেপ্টেম্বর যুদ্ধের দিন পাক সেনারা বংশীতলা মোড়ে অবস্থান নিলে দুর্বাচারা থেকে পাল্টা আক্রমণে যান মুক্তিসেনারা। ওই যুদ্ধে সামগ্রিকভাবে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আবুল কাশেম। তবে ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে ১১ জন শহীদ হন এবং ২০/২৫ জন আহত হন। নিহতদের পাঁচজনকে দুর্বাচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাফন করা হয় এবং বাকিদের বিভিন্ন জায়গায় বিৰিপ্তভাবে সমাহিত করা হয়। এরমধ্যে একজনকে কমলাপুর ফুটবল মাঠের পাশে দাফন করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বরের ওই যুদ্ধে ১১ জন শহীদ হলেও দুর্বাচারায় ছয়জনকে পাশাপাশি সমাহিত করা হয়। তাঁরা হলেন_তাজুল ইসলাম, দিদার আলী (বীর প্রতীক), ইয়াকুব আলী, সাবান আলী, আব্দুল মান্নান ও শহিদুল ইসলাম। বাকিদের বিৰিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় দাফন করা হয়। আর শহিদুল ইসলাম শহীদ হন ৬ ডিসেম্বর করিমপুরের যুদ্ধে। বংশীতলা যুদ্ধের পর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে করিমপুরে আরেক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ওই যুদ্ধেও মুক্তিবাহিনী দুর্বাচারা থেকে তাদের মিশন শুরম্ন করে। মুখোমুখি ওই যুদ্ধে শহীদ হন তৎকালীন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ার্স কলেজের মেধাবী ছাত্র শহীদুল ইসলাম। তাকেও পরে দুর্বাচারা পাঁচ শহীদের পাশে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে এমন অবদান রাখা সত্ত্বেও সংশিস্নষ্ট এলাকাগুলো আজও অবহেলার শিকার।

সংশিস্নষ্ট এলাকাবাসী আবেগ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার পরও আমাদের এখানে তেমন কিছুই হয়নি। দুর্বাচারায় কোন রকমে ছয়টি কবর ইট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। বংশীতলা ও করিমপুরে দুটি নামফলক টানানো রয়েছে। বিশেষ করে দুর্বাচারার সর্বসত্মরের জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের আৰেপ যেন কেউ দেখার নেই। করিমপুর যুদ্ধে শহীদ হওয়া শহীদুল ইসলাম ছিলেন অত্র এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। তৎকালীন সময়ে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ার্স কলেজে ইলেকট্রিক্যাল তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। বর্তমানে যা রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রম্নয়েট) নামে পরিচিত।

উজানগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম সলিম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে শহীদুল ছিলেন অতি মেধাবী একজন ছাত্র। ওই সময়ে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীৰায় তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে পাড়ি জমান রাজশাহী। কিন্তু দেশমাতৃকার প্রয়োজনে কলম ছেড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন দেশপ্রেমের হাতিয়ার। ৬ ডিসেম্বর অকুতভয় এ বীর সনত্মান পাক হানাদারদের নৃশংসতার শিকার হন। এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে শহীদুল ইসলামের ছোটভাই, সহযোদ্ধা ও উজানগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাবু-বিন-ইসলাম অশ্রম্নসজল কণ্ঠে বলেন, এই কষ্ট ভোলার নয়। আমার সামনে ভাইকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। আর আমাকে আটক করে বিত্তিপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শহীদ ভাইকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার বাবার। তার ইচ্ছা ছিল, নামী ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে শহীদ। ভাইয়ার মেধার কথা সবাই জানত। রাজশাহীতে ভাইয়ার ব্যাচে সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন তিনি। যেকারণে শহীদ হওয়ার পর ভাইয়ার নামে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নামকরণ করা হয়। অর্থাৎ বর্তমান রম্নয়েট ক্যাম্পাসের শহীদুল ইসলাম হল। মুক্তিযোদ্ধা সাবু-বিন-ইসলাম হতাশা আর ক্রোধের সুরে আরও বলেন, আমরা নিঃশর্তভাবে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন আমাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই! অন্য কিছুর ন্যায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ বঞ্চিত আর অপমানিত। মনে অনেক ব্যথা, কষ্ট। এ অবস্থা দেখার জন্য যুদ্ধ করিনি। ভ- মুক্তিযোদ্ধারের ভিড়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এতটাই অসহায় যে, এখন আর আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন অনুষ্ঠানে যাই না। কারণ নিজেরই লজ্জা লাগে, ঘৃণা হয়। বীর এ মুক্তিযোদ্ধার নিজের জন্য কিছুই চাওয়ার নেই। তবে তিনি এখনও অধীর আগ্রহে অপেৰা করছেন, দুর্বাচারায় ছয়জন শহীদের কবরের স্থানে স্মৃতিসত্মম্ভ স্থাপন করা হবে। তার দৃঢ় আশা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সপৰের সরকার এটি বাসত্মবায়ন করবে।

বংশীতলা যুদ্ধে শহীদ হন দুর্বাচারার আরেক কৃতী সনত্মান তাজুল ইসলাম। তৎকালীন সময়ে অনার্স পড়ুয়া এ ছাত্র সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর হাতের হলুদ থাকা অবস্থাতেই ভারতে ট্রেনিংয়ে যান। সেখান থেকে এসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শহীদ তাজুলের বাবা করিম শেখ বলেন, তাজুল ছিল পরোপকারী। অন্যের উপকার করাই যেন ওর নেশা ছিল। দুঃসাহসী তাজু বংশীতলা যুদ্ধে একাই শায়েসত্মা করেন এক পাক সেনাকে। ওর শক্তির কাছে হার মেনে শত্রম্নরা পেছন থেকে গুলি করে কাপুরম্নষের মতো ওকে হত্যা করে। ৮০ বছর বয়সী তাজুর বাবা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, দেশের জন্য ছেলে জীবন দিয়েছে এটা ভাবলে গর্ব লাগে। কিন্তু কি পেয়েছি আমরা? ছেলের কবরটিই যথাযথভাবে বাঁধানো হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর কত সরকারই তো গেল এল। কিন্তু কেউ এদিকে দৃষ্টি দেয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, যেন কবরগুলো ভালমতো বাধানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং সেখানে স্মৃতিসত্মম্ভ তৈরি করা হয়। তাজুলের বড়ভাবি জাহানারা বেগম এবং বোন মেহেরম্নন্নেসা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ও সবসময় অন্যের চিনত্মা করত। ছোটদের আদর করত। আমাদের সঙ্গে মজা করত। এত প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেকে ওরা কাপুরম্নষের মতো হত্যা করে। এখনও বিশ্বাস করতে পারি না, তাজু নেই। যুদ্ধস্থান থেকে তাজুর লাশ কাঁধে বহন করে নিয়ে আসা তাজুর মামা তোব্বার মোলস্নার কাছে ঘটনার বর্ণনা শুনতে চাইতেই শিশুর মতো কেঁদে ওঠেন তিনি।

অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাই যে অনত্মরালে রয়ে গেছেন; অনাহারে, অর্ধাহারে নিদারম্নণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তার বাসত্মব নিদর্শন মুক্তিযোদ্ধা বাজর মলিস্নক। ৭৮ বছর বয়সী এই দেশপ্রেমিক বর্তমানের সুপরিচিত অনেক মুক্তিযোদ্ধার চেয়েই যুদ্ধে অবদান বেশি রেখেছিলেন, এমন দাবি এলাকার মুরবি্বদের। প্রত্যৰভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে আজ তিনি বৃদ্ধ বয়সে জীবন যুদ্ধে লিপ্ত। দু'মুঠো অন্নের জন্য শহীদদের কবরের পাশেই ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছেন। দুই ছেলে নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খায়। একারণে বাবাকে আর দেখা হয়ে ওঠে না। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বাবা এখন মুদি দোকানদার। দুর্বাচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীরাই তার খদ্দের। যুদ্ধের স্মৃতি জানতে চাইলে জীবনের শেষ ধাপে উপনীত হওয়া এই বৃদ্ধ বলেন, কি আর কব নাতি। মেলা সম্বাদিকই (সাংবাদিক) তো আসে আর যায়। কিছু্ হয় না তো। যুদ্ধ না করেই অনেকে তদ্বির জোরে সার্টিফিকেট যোগাড় করে দেদারছে ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ বিভিন্ন সময় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনরকম সুযোগ-সুবিধা পাননি বৃদ্ধ এই মুক্তিযোদ্ধা। কণ্ঠে এই না পাওয়ার আপসোস থাকলেও শেষ ইচ্ছা হিসেবে তিনিও দুর্বাচারায় শহীদদের কবরের স্থানে স্মৃতিসত্মম্ভ দেখে যাওয়ার আকাঙ্ৰা ব্যক্ত করেন।

তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা না হলেও ১৯৭১সালে প্রত্যৰভাবে যুদ্ধে অংশ নেন আসাদুর রহমান। অনেক নামধারী মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়েও তাঁর অবদান অনেক বেশি ছিল, যা এখনও অব্যাহত। বতর্মানে দুর্বাচারা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক হিসেবে কর্মরত এই প-িত ব্যক্তির উদ্যোগেই যেন কোনরকমে টিকে রয়েছে দুর্বাচারা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। তিনি প্রাণানত্মভাবে ছয় মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল সংরৰণ এবং দুর্বাচারার যুদ্ধ ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতোমধ্যে তাঁর চেষ্টার ফসল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলের পশ্চিম পাশে 'মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর' স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেখানে ঐতিহাসিক তেমন কিছুই সংরৰণ করা সম্ভব হয়নি। আরও একটি মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে দুর্বাচারার বীরত্বকে অমস্নান করতে লিখছেন বই। যেখানে থাকবে তথ্য-উপাত্তসহ সমসত্ম ঘটনা। প্রবীণ এই শিৰক আশার সুরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার মধ্যে সবচেয়ে গৌরবের স্থান দুর্বাচারা। কুষ্টিয়া জেলায় একমাত্র এখানেই রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত সমাধি। এতকিছুর পরও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় এখানে তেমন কিছুই হয়নি। এটা অনেক কষ্টের। এরপরও আশা রাখি, ভবিষ্যতে হয়ত দুর্বাচারায় সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৌরবময় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

দেশ শত্রম্নমুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার পরও দীর্ঘদিন দুর্বাচারায় ছয় শহীদের সমাধিস্থল ছিল অরৰিত। বেশ কয়েকবার কবর নির্মাণের কাজ এলেও সংশিস্নষ্টরা অর্থ আত্মসাত করায় নির্মাণ কাজ যথাযথ হয়নি। অবশেষে কয়েক বছর আগে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাসিম উদ্দিন আহমদ ও তৎকালীন উজানগ্রাম ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম শমসের আলী মোলস্নার প্রচেষ্টায় কবরের উন্নয়ন কাজ হয়। যে প্রকল্পের নাম 'রক্তঋণ'। ওই প্রকল্পের আওতায় চারদিকে ইট দিয়ে বাধাই করে প্রত্যেকের কবরের সামনে নামফলক দেয়া হয়। এরপর আর কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বরের আগে শুধু চুনকালি করেই দায়িত্ব শেষ! এলাকাবাসীর দাবি, এখানে যেন স্মৃতিসত্মম্ভ তৈরি করা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মহান স্মৃতি বহনকারী এ জায়গায় (দুর্বাচারা) যদি সরকারীভাবে কোন স্থাপনা করা হয় তাহলে জায়গাটি পরিণত হতে পারে ঐতিহাসিক স্থানে।

তথ্য সুত্রঃ- জাহিদুল আলম জয়, দৈনিক জনকণ্ঠ

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.