আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

আব্দুল জব্বার (কণ্ঠশিল্পী)
আব্দুল জব্বার (কণ্ঠশিল্পী)

মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার ( জন্মঃ ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ - মৃত্যুঃ ৩০ আগস্ট, ২০১৭) একজন বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী। আব্দুল জব্বার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত "সালাম সালাম হাজার সালাম", "জয় বাংলা বাংলার জয়" সহ এরকম আরো অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের নিকট।

তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়", "সালাম সালাম হাজার সালাম" ও "জয় বাংলা বাংলার জয়" গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় স্থান লাভ করেছে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

জব্বার ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৯৬২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হয়ে উঠেন। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র সংগম-এর গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু" গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৮ সালে পীচ ঢালা পথ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে "পীচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি" এবং ঢেউয়ের পর ঢেউ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে "সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো" গানে কণ্ঠ দেন। তার একটি কালজয়ী গান ১৯৭৮ সালের সারেং বৌ ছবির আলম খানের সুরে "ও..রে নীল দরিয়া"।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যুগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালাম সালাম হাজার সালামজয় বাংলা বাংলার জয় সহ অংসখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া যুুদ্ধের সময়কালে তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন। তৎকালীন সময়ে কলকাতাতে অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প ঘুরে হারমোনি বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন যা মুক্তিযুদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে সেসময় বিভিন্ন সময় গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি দান করেছিলেন।

আব্দুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী শাহীন জব্বার। শাহীন একজন গীতিকার। তার লেখা গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্দুল জব্বার, সুবীর নন্দী, ফাতেমা-তুজ-জোহরার মত সঙ্গীতশিল্পীরা। তাদের সন্তান মিথুন জব্বারও সঙ্গীত বিষয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি প্রথমে গান শিখেছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রধান ওস্তাদ ফজলুল হক এবং পরে ওস্তাদ করিম শাহাবুদ্দীনের কাছে। ২০১৩ সালের বৈশাখে তার স্মৃতির বাড়ি নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং আগস্টে অ্যালবামটির ডিভিডি প্রকাশিত হয়। জব্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা। মিতার সাথে জব্বারের পরিচয় হয় একটি মাজারে এবং সেই পরিচয়ের সুবাদের তাদের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। মিতা ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ পারিবারিক ঝগড়ার জের ধরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ ভর্তি করা হয়। চারদিন পর ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের এই দিনে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

প্লেব্যাকঃ

  • কোথায় আমার নীল দরিয়া (২০১৭)
  • সংগম (১৯৬৪)
  • নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭)
  • উলঝন (১৯৬৭)
  • পীচ ঢালা পথ (১৯৬৮)
  • এতটুকু আশা (১৯৬৮)
  • ঢেউয়ের পর ঢেউ (১৯৬৮)
  • ভানুমতি (১৯৬৯)
  • ক খ গ ঘ ঙ (১৯৭০)
  • দ্বীপ নেভে নাই (১৯৭০)
  • বিনিময় (১৯৭০)
  • জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
  • নাচের পুতুল (১৯৭১)
  • মানুষের মন (১৯৭২)
  • স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা (১৯৭৩)
  • ঝড়ের পাখি (১৯৭৩)
  • আলোর মিছিল (১৯৭৪)
  • সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)
  • তুফান (১৯৭৮)
  • অঙ্গার (১৯৭৮)
  • সারেং বৌ (১৯৭৮)
  • সখী তুমি কার (১৯৮০)
  • কলমিলতা (১৯৮১)

 

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ

    • বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩)
    • একুশে পদক (১৯৮০)
    • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬)
    • জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার
Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.