আপনাকে কুষ্টিয়াশহর.কম এর পক্ষ হতে ঈদ মোবারক 🌙। বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়াবাসীর স্বপ্ন পুরুষ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক
কুষ্টিয়াবাসীর স্বপ্ন পুরুষ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক

কুষ্টিয়াবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পর্যটন নগরী সৃষ্টিতে সেই রুপকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, আন্তর্জাতিক খ্যতিমান প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।

কুষ্টিয়াবাসীর স্বপ্ন পুরুষ এই মহান গুনীব্যাক্তি এক সময় বলেছিলেন, কুষ্টিয়া শহরকে পর্যটন নগরী সৃষ্টিতে আমাদের ২টি সেতু, শহর রক্ষার্থে বাঁধ, পার্ক, শহর সৌন্দর্য কারুকাজ, ফুটপাত, রিসোর্ট প্রয়োজন। আর কুষ্টিয়া শহরের সাথে সংযোগ করেতে হবে দুইটি ইউনিয়নকে। এই গুনীব্যাক্তিই প্রথম গড়াই নদীর উপর ২টি ব্রিজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি কুষ্টিয়া-হরিপুর ইউনিয়নের সাথে আরেকটি কুষ্টিয়া-কয়া ইউনিয়নের সাথে সংযোগ সেতু নির্মাণের। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জেলা হিসেবে কুষ্টিয়া শহরকে একটি রোল মডেল করতে চেয়েছিলেন।

কুষ্টিয়াবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পর্যটন নগরী সৃষ্টিতে গড়াই নদীর উপর দিয়ে সেতু, শহর রক্ষার্থে বাঁধ, পার্ক, শহর সৌন্দর্য কারুকাজ, ফুটপাত, রিসোর্ট ইত্যাদি নির্মাণের জন্য। তিনি তৎকালীন প্রয়াত জাসদ নেতা ও হরিপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান শহীদ এম মাহমুদ হোসেন সাচ্চুকে অন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের জন্য হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগসেতু নির্মাণের দাবী করতে বলেন। তখন শহীদ এম মাহমুদ হোসেন সাচ্চু চেয়ারম্যানের নিদের্শাক্রমে সেতুর দাবিতে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরে হরিপুরবাসী। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরে ২০০০ সালের ১১ জুলাই একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন সাচ্চুকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৪ জুলাই তিনি মারা যান। অতঃপর দীর্ঘদিনের সেই দাবিকৃত হরিপুর কুষ্টিয়া সংযোগসেতু স্থাপনের বিষয়ে এলজিইডি-র প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক থাকাকালীন সময়ে তাঁর তদারকিতে বিশেষজ্ঞ টিমের সাইট পরিদর্শন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম গৃহীত হয়। এ কথাগুলি ব্যাক্ত করেন প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক এর অতি ঘনিষ্ট ভাজন ও হরিপুর ইউনিয়নের আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সবুর, ফেরদৌসসহ বেশ কয়েকজন প্রবীন সুধীমহল।

এলাকাবাসীর তথ্য মতে ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা সত্য যে, কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতুর পিছনে অবদান রয়েছে জাতীয় সংসদ সদস্য মাহাবুব-উল আলম হানিফের। আবার হাটশ হরিপুরবাসী এ ব্রিজ নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রাম করে এলেও বিএনপির সময় জনগণের দাবির মুখে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির জনপ্রিয় নেতা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন গড়াই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও তা তিনি বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহাবুব-উল আলম হানিফ হাটশ হরিপুরবাসীর প্রাণের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে এ ব্রিজ নির্মাণে ওয়াদা করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেই এ ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এবং হরিপুরবাসী এ ব্রিজের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করবেন। তার এ ওয়াদা আজ বাস্তবে রূপদান করলো। গত ২৪ শে মার্চ-২০১৭ তারিখে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধানে গড়াই নদীর ওপর ৫০৪.৫৫ মি. এ গড়াই সেতুর উদ্বোধন করেন এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজকের শেখ রাসেল হরিপুর কুষ্টিয়া সংযোগসেতু গড়াই নদীর ওপর এই নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে ব্রিজ নির্মাণের সাথে নদী শাসনের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৩ টাকা এবং এপ্রোস রোড নির্মাণ করা হয়েছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৩২ হাজার ১৪৭ টাকা। এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব আলীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মেসার্স মীর আক্তার হোসেন লি. ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর কাজ শুরু করে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬-তে শেষ করেন। ব্রিজটির নামকরণ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেকেই দাবি করেছিলেন এবং স্বারক লিপি দিয়েছিলেন সেতুর নাম হোক “কবি আজিজুর রহমান” সেতু। অবশেষে সকল জটিলতা কাটিয়ে শেখ রাসেল সেতু নামকরণ করা হয়। এলজিইডি সূত্র জানায়, উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এ সেতু ৫০৪ মিটার (সুড়ঙ্গ পথসহ) দীর্ঘ, প্রস্থে ৬ দশমিক ১ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট ফুটপাত করা হয়েছে। কুষ্টিয়া অংশে ২০০ মিটার ও হরিপুর অংশে ১৯৬ মিটার সংযোগ সড়ক হয়েছে। ৪২.০৫ মিটার করে ১২টি স্প্যানের প্রতি স্প্যানে ৪টি গার্ডার। সব মিলিয়ে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিনের দাবিকৃত এই হরিপুর কুষ্টিয়া সংযোগসেতু স্থাপনের বিষয়ে এলজিইডি-র প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালীন সময়ে যার তদারকিতে বিশেষজ্ঞ টিমের সাইট পরিদর্শন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম গৃহীত হয়েছিল। তিনি হলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও আন্তর্জাতিক খ্যতিমান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারী কুষ্টিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন বোর্ড, ডি,টি,বি,সির নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি গৃহায়ন ও গনপুর্ত মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এলজিইডির চীফ ইঞ্জিনিয়ার থাকাকালীন অবস্থায় দেশের গ্রামীন অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নে ঐতিহাসিক ভুমিকা রাখেন। এছাড়াও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ও বেকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখেছেন।

তিনি কুষ্টিয়া মিশন স্কুল ও সিরাজুল হক মুসলিম হাই স্কুলে তার বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত হয়। কুষ্টিয়া কলেজ থেকে তিনি ১৯৬২ সালে আই এস সি পাশ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি পৌর প্রকৌশলী হিসাবে খুলনা মিউনিসিপ্যালিটিতে বদলি হয়ে যান। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ইংল্যান্ডের শেফিল বিশ্ববিদ্যালয়ের টাউন এন্ড রিজিওন্যাল প্লানিং এ মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জনের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডে যান।ইংল্যান্ড থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে বাংলাদেশে ফিরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগে (এলজিইডি) গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পিডিবির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আলোচিত গুলিস্থান যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্পের মুল পরিকল্পনাকারী। ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতি তাকে উন্নয়ন সারথী পদক ২০০২ প্রদান করেছে। ১৯৮৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের শেফিড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান এন্ড রিজিওন্যাল প্লানিং মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক দেশের জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়নগুলোর ম্যাপ প্রস্তুতির জন্য জিয়াইএস (গ্রাফিক্স ইনফরমেশন সিষ্টেম)চালু করেন। কৃষিক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষন করে ইরি চাষের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা পুরনে অংশগ্রহন মুলক পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তিনি বাংলাদেশে রাবার ডাম প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য রাবার ডাম স্থপন করেন। তার সময় গুরুত্বপুর্ন প্রকল্প জাইকার সাহায্যপুষ্ট আদর্শ গ্রামীন উন্নয়ন প্রকল্প অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সমাপ্ত হয়। তিনি ১৯৯১ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে পি,ডি,বিতে যোগদান করেন। যোগদান করে বিদ্যুৎ চোর (শিল্পপতিদের)ধরতে শুরু করলে ঐ পদে আর থাকতে পারেন নাই। কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ঈদগাহপাড়ায় তাঁর নামে "কামরুল ইসলাম সিদ্দিক শিশু পার্ক" স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক গত ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কুষ্টিয়াবাসীসহ সারা দেশব্যাপি এই মহান গুনীব্যাক্তিকে আজো শ্রদ্ধার সাথে স্বরণকরে থাকেন।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.